ধারণা নয়, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতারা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটি ধারণা দিয়েছেন; কিন্তু বিএনপি ধারণা নয় সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে নেতারা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। যতদিন পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার আসবে না ততদিন পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকবে। তাই আমরা চাই এই সরকার রোডম্যাপ ঘোষণা করুক।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মির্জা আব্বাস এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সালাউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে, সে জন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। আমরা আশা করি, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) সংস্কারের সময় ও নির্বাচনের সময় সুনির্দিষ্ট করে একটি রোডম্যাপ দেবেন।
এছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত শেষে সাংবাদিকদেরকে মির্জা আব্বাস বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে বলেছেন ২০২৫ সালের শেষে কিংবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে এই বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর জনগণের চাওয়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। তাই অতিদ্রুত সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে একটি গণতান্ত্রিক সরকার উপহার দিতে হবে।
জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের কাছে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলেন, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন তা যথার্থ। নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করবেন বা নির্বাচনে যারা অংশীজন তারা যদি নির্বাচন চায় তিনি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেবেন এমন বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এই বাইরে কারও অন্যকোনো স্বার্থ থাকতে পারে না। সেইসঙ্গে তার দাবি, সংস্কার এমন একটা বিষয় যা যুগ যুগ ধরে চলে ও চলবে, যা নতুন কিছু না। সংস্কার এটা কোনো প্যাকেট না যে এনে ছেড়ে দিলাম আর হয়ে যাবে। আমরা আশা করি এই সরকার দ্রুত জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে।
দীর্ঘদিন আপনারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন বিজয় দিবসে আপনাদের প্রত্যাশা কী জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে সাভারে স্মৃতিসৌধে গিয়েছি এই মাজারে এসেছি বহুবার কিন্তু জনগণের এমন ঢল আর দেখি নাই। এর একটা মাত্র কারণ জনগণের বাঁধভাঙা উল্লাস। এই দেশের মানুষ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। এই দেশের মানুষ চায় এক স্বৈরাচার মুক্ত হয়ে অন্য কোনো স্বৈরাচারের হাতে না পড়তে। এদেশের মানুষ চায় ভোটের অধিকার, আমরা শুনেছি দেখেছি নির্বাচনের কথা বললে অনেকের মুখ বাঁকা হয়ে যায়।
নির্বাচন সুনির্দিষ্ট করার দাবি জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান তার বক্তব্য পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন নির্বাচনের জন্য আমাদের কতদিন অপেক্ষা করতে হবে জানিয়ে দিন। আমরা অপেক্ষা করতে রাজি। কিন্তু সংস্কারের নামে যুগ যুগ ধরে এইভাবে চলতে পারে না। আজকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস। মানুষ আজকে বাঁচার আশ্রয় খুঁজছে। মানুষ কথা বলছে ঠিকই কিন্তু তাদের অভাবের তাড়না এখনো রয়ে গেছে।
মির্জা আব্বাসের দাবি, দেশে যতদিন পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার আসবে না ততদিন পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকবে। তাই আমরা চাই এই সরকার রোডম্যাপ ঘোষণা করুক।
উপদেষ্টাদের রাজনীতিবিদদের সম্মান দিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, একজন উপদেষ্টা কিছুদিন আগে বলেছেন ৫৩ বছর রাজনৈতিক নেতারা কী করেছেন। আমি তাকে বলতে চাই, আপনি রাজনীতি করেন না। রাজনৈতিক নেতা সম্পর্কে দয়া করে সম্মান দিয়ে কথা বলুন। একজন রাজনীতিবিদ একদিনে তৈরি হয়নি। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একদিনে তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যা বলেন তা একটু বোঝার চেষ্টা করেন। আপনারা এই কথা ভাববেন না আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করছি। ক্ষমতা যাওয়ার কথা আমরা কখনো বলি না আজও বলি না কখনো বলবো না। আমরা শুধু চাই জনগণের ভোটের অধিকার।
জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা হতে নেতাকর্মীরা সমাধির আশপাশের রাস্তায় অবস্থান করার কারণে কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, কেন্দ্রীয়সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমুদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু উপস্থিত ছিলেন।