দেশে শতকরা ৪০ জন শিক্ষিত তরুণ কর্মহীন

দেশে প্রতিবছর প্রায় দুই মিলিয়ন তরুণ কর্মজীবনে প্রবেশ করলেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয় না। শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘শিক্ষা ও শিল্প খাতের সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ’ বিষয়ক মতবিনিময়সভায় সংগঠনটির সভাপতি আশরাফ আহমেদ এমন মন্তব্য করেন। এ ছাড়া শিক্ষিত তরুণদের প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মহীন বলেও উল্লেখ করেছেন ইউল্যাবের উপাচার্য ইমরান রহমান।

আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় দুই মিলিয়ন তরুণ কর্মজীবনে প্রবেশ করছে, যদিও আমরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারছি না।

বিআইডিএসের তথ্য মতে, ৬৬ শতাংশ স্নাতক শিক্ষাজীবন সম্পন্নকারী তরুণ কর্মহীন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক বলছে, টেকনিক্যাল খাতে দক্ষ মানবসম্পদের অপ্রতুলতা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমাদের শিল্প খাতের প্রয়োজন মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিদেশি দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে, যেখানে খরচ হচ্ছে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশি প্রবাসীরাও উচ্চ পারিশ্রমিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারছে না।

বিদ্যমান বাস্তবতায়, বিশেষ করে শিল্প খাতের প্রয়োজনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে আরো বেশি হারে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন এবং এ লক্ষ্যে শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য।

আশরাফ আহমেদ উল্লেখ করেন, ‘বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিল্প খাতের প্রয়োজনের নিরিখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষাক্রম সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, যদিও আমাদের দেশে বিষয়টি এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্প খাতের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে ডিসিসিআই বিজনেস ইনস্টিটিউট (ডিবিআই) বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় ডিপ্লোমা, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েটসহ নানামুখী প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করছে।’

ইউল্যাবের উপাচার্য ইমরান রহমান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষিত তরুণদের প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মহীন, যা খুবই হতাশাব্যঞ্জক এবং এ অবস্থা উত্তরণে শিক্ষা ও শিল্প খাতের সুসমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই।’

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ও প্রয়োজন সম্পর্কে ধারণা দিতে ইন্টার্নশিপের পাশাপাশি অ্যাপ্রেনটিসশিপের উদ্যোগ গ্রহণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। এ ছাড়া তিনি তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা কার্যক্রমে শিল্প খাতের আর্থিক বরাদ্দকে কর অব্যাহতির সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান, যা এ কার্যক্রমে বেসরকারি খাতকে আরো বেশি হারে সম্পৃক্তকরণে উৎসাহিত করবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার শিক্ষা ও শিল্প খাতের মধ্যকার আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা-কারিকুলাম বেশ ভালো।

প্রয়োজনের নিরিখে তা যুগোপযোগী করা যেতে পারে। তবে কারিকুলামের ঘন ঘন পরিবর্তন তেমন সুফল বয়ে আনবে না।
মতবিনিময়সভায় এআইইউবির উপ-উপাচার্য মো. আব্দুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক আলী আক্কাস, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম ওয়ারিসুল করিম, বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ডিন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেনসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আলোচকরা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসএআর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমে বরাদ্দ বাড়ানোসহ এসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন, শিল্প খাতে দক্ষ গ্র্যাজুয়েটদের নিয়োগদানে ভালো পারিশ্রমিক প্রদান নিশ্চিত করা, ইউজিসির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন কারিকুলাম দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন, আগামী ১০ বছর শিল্প খাতের কী ধরনের দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন তার ডাটাবেইস প্রণয়ন এবং স্টুডেন্ট প্রজেক্টগুলোর অর্থায়নে বেসরকারি খাতের এগিয়ে আসার ওপর জোরারোপ করেন।

ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে মতবিনিময়সভায় ডিসিসিআই বিজনেস ইনস্টিটিউটের (ডিবিআই) সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষরকারী সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও অধ্যাপকরা উপস্থিত ছিলেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.