দেশে দেশে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ
যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফিলিস্তিনের গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ২০০ শিশুসহ কয়েক শ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে শুক্রবার (২১ মার্চ) বিক্ষোভ হয়েছে বিভিন্ন দেশে।
শুক্রবার জেরুজালেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন ইসরায়েলিরা। বিক্ষোভে জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের বাইরে অবস্থান নেন তারা। তাদের হাতে ছিল ইসরায়েলের পতাকা ও সরকারের সমালোচনা করে লেখা প্ল্যাকার্ড।
পশ্চিম জেরুজালেমে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মাইকেল হালপেরিন বলেন, শিন বেতের বদলে প্রধানমন্ত্রীকে এখন গাজায় মৃত্যুর মুখে থাকা বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
জেরুজালেম ও তেল আবিবে গত বুধ ও বৃহস্পতিবারও বড় বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এই দুই এলাকা থেকে অন্তত ১২ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আগের দিন বুধবার জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছের সড়কগুলোয় অবস্থান নেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের অনেকের স্লোগান ছিল—‘এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা চালিয়ে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। এরপর কয়েক দফায় বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির সময় ৩৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। বাকিদের যুদ্ধবিরতির পরবর্তী দুই ধাপে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে টানা চার দিন ধরে চলা হামলায় ৫৯০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে দুই শতাধিক শিশু।
গাজায় ১৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলা হামলায় ৪৯ হাজার ৬১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে নতুন করে হামলার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন নানা দেশের মানুষ। গতকাল দিবাগত রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরাক, জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের নির্মম হামলার প্রতিবাদে বড় বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে রাজধানী ইসলামাবাদে ইসরায়েলের মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ঘেরাও করেন জামায়াত-ই-ইসলামি পাকিস্তানের (জেআই) সদস্য ও সমর্থকেরা। পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কনস্যুলেট ঘেরাও করা হয়। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকায় আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা।
রাজনৈতিক দল জেআইয়ের প্রধান নাইম-উর-রহমান বলেন, সারা বিশ্বের মতো পাকিস্তানও নিপীড়কদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে। এর আগে জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুনির আকরাম গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশ ও দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
গাজায় হামলার প্রতিবাদে মধ্যপ্রাচ্যেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের হাতে জর্ডানের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা যায়। ইসরায়েলবিরোধী নানা স্লোগান দেন তাঁরা। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বাইরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভকারীদের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকার পাশাপাশি ছিল নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী প্ল্যাকার্ড।
এদিকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপের পর ক্রেমলিন জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিরসনে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করতে প্রস্তুত রাশিয়া ও কাতার। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দেশটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বেসামরিক প্রত্যেক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করছে যুক্তরাজ্য।