দেশে অনিরাপদ খাদ্যের কারণে বছরে মৃত্যু ৩৫ হাজার

অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতিবছর দেশে ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং প্রতিদিন অন্তত ৫ শতাংশ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এক সেমিনারে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২৫ পালন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেন, পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। আমাদের পুষ্টির সমস্যার মূল কারণই হচ্ছে, অনিরাপদ খাদ্য। আর অনিরাপদ খাবার গ্রহণের ফলে শিশু, গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা তৈরি হয়। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে দিনে ৫ শতাংশ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং দেশে প্রতিবছর ৩৫ হাজার মানুষ মারা যায়।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়ার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন—খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান, বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম।

খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা এই তিনটি জিনিসকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো একে অপরের পরিপূরক। সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে বিশ্বে ৭০০ বিলিয়ন লোকের খাদ্য কত নিরাপদ আজ সেই প্রশ্নটি জেগেছে।’

মাসুদুল হাসান বলেন, ‘অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে দিনে ৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমান বিশ্বে নানা কারণে আমাদের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ইকোনাইটের সংক্রমণে সবজি পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে, এসব বিদেশে রপ্তানি করতে সমস্যায় পড়তে হয়। আজকের সেমিনার থেকে আলোচনার মাধ্যমে একটি দিকনির্দেশনা বেরিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।’

স্বাগত বক্তব্যে জাকারিয়া বলেন, ‘আমাদের তিনটি কাজ একসঙ্গে হচ্ছে। এগুলো হলো—একনেকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন, খুলনায় ল্যাব স্থাপনে গণপূর্ত থেকে জমি বরাদ্দ এবং জাতীয় সেমিনার আয়োজন।’

জাকারিয়া আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুযায়ী, আমাদের দেশে দৈনিক ৮০ জন ও বছরে ৩০ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর অন্যতম কারণ অনিরাপদ খাদ্যগ্রহণ। আমরা শিশুদের নিরাপদ খাদ্যে উদ্বুদ্ধ করতে লুডু খেলার ঘর তৈরি করেছি। যাতে তাদের মধ্যে খাদ্য নিরাপদের বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো যায়।’

ড. খালেদা ইসলাম বলেন, ‘অনিরাপদ খাদ্যের কারণে প্রতি ১০ জনে একজন অসুস্থ হয়। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে প্রতিবছর বিশ্বে পাঁচ বছরের নিচে ৪ লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে বছরে ৩৫ হাজার মানুষ অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মারা যায়।’

খালেদা ইসলাম, ২০২১ সালের বাংলাদেশ খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের খাবারে কত ভেজাল রয়েছে তার একটি পরিসংখ্যা তুলে ধরছি। আমাদের ঘির মধ্যে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, গুড়ে ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মধুতে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, মিষ্টিতে ২৮ দশমিক ৫৭, হলুদে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ডাল/ছোলায় ৫ শতাংশ, চালে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, মরিচে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ, গুঁড়া দুধে ১৬ দশমিক ৬৭ এবং লবণে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ।’

খাদ্য নিরাপদ রাখার উপায় সম্পর্কে ড. খালেদা ইসলাম বলেন, ‘খাদ্য নিরাপদ রাখতে হলে—১. খাবার পরিষ্কার রাখতে হবে। ২. রান্না ও কাঁচা খাবার একসঙ্গে রাখা যাবে না। ৩. রান্না করতে হবে ঢেকে। ৪. খাবার সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে এবং ৫. রান্নায় নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে।’

বাজার থেকে কী ধরনের খাবার কিনতে হবে জানিয়ে খালেদা ইসলাম বলেন, ‘ফল, শাক-সবজি কেনার সময় রং ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে। মৌসুমি ফল, শাক-সবজি কিনতে হবে। পচা বা গন্ধযুক্ত খাবার কেনা যাবে না। হাত দিয়ে দেখতে হবে।’ তেলের ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, ‘তেলে চর্বির পরিমাণ কতটা সেটা দেখতে হবে।’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.