দেশের স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত হচ্ছে নতুন পালক
মাল্টিডিসিপ্লিনারি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় এবার যুক্ত হচ্ছে নতুন পালক। বিভাগভিত্তিক চিকিৎসাসেবা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করছে সেন্টার বেইসড হাসপাতালের যুগে। দেশে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে মাল্টিডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। রাজধানীর শাহবাগে ১২ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটির নির্মাণকাজ, যন্ত্রপাতি কেনার কাজ শতভাগ শেষ। জনবল নিয়োগ হলে চলতি বছরই এটি চালু করা সম্ভব হবে।
বিএসএমএমইউর উত্তর পাশে ৩.৮ একর (প্রায় ১২ বিঘা) জমির ওপর এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১২ সালে। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এক হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অনুমোদন মেলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটিতে। এ হাসপাতাল নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার থেকে এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা ঋণ সহযোগিতা পাওয়া গেছে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করছে হুন্দাই করপোরেশন কোরিয়া। যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছে স্যামসাং কোরিয়া।
যা যা থাকছে : সুপরিসর ৯টি ফ্লোর ও তিনটি বেজমেন্ট নিয়ে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি হচ্ছে ৮৫০ শয্যার। এর বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন আট হাজার রোগী সেবা পাবে। এতে থাকছে ১০০টি আইসিইউ বেডসহ ইমার্জেন্সি বেড।
আছে ২৫০টি কার পার্কিং সুবিধা। পাঁচটি ভিন্ন সেন্টারে থাকছে জরুরি চিকিৎসাসেবা, মা ও শিশু কেন্দ্র, কার্ডিওভাসকুলার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার ও কিডনি ডিজিজ সেন্টার। ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, যেখানে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনসহ উন্নত মানের সার্জারি সম্পন্ন হবে। হাসপাতাল নির্মাণ ও উন্নত প্রশিক্ষণ—এই দুই ভিত্তিতে হাসপাতাল প্রকল্পটিকে সাজানো হয়েছে।
এই স্পেশালাইজড হাসপাতালে থাকছে পাঁচটি ভিভিআইপি বা ভিআইপি কেবিনসহ আইসোলেটেড কেবিন, ওয়ার্ড, সার্জিক্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার, মেডিক্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার, করোনারি কেয়ার ইউনিট, নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট এবং পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট। ৮০ জন চিকিৎসক, ৩০ জন নার্স, ১০ জন মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান এবং ২০ জন প্রশাসন শাখার লোককে সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রায় ৫৬ জন কোরিয়ান বিশেষজ্ঞ সরাসরি দেশে এসে প্রশিক্ষণ দেবেন আরো ৪৮০ জনকে।
এক ছাদের নিচে সব সুবিধা : এই স্পেশালাইজড হাসপাতালে সেবা নিতে এসে রোগীকে অন্য কোনো জায়গায় যেতে হবে না। হাসপাতালের ভেতরেই থাকবে কনভেনিয়েন্স শপ, ব্যাংকিং সুবিধা, ফার্মেসি, ৩৫০ সিটবিশিষ্ট উন্নত কিচেন, যার আওতায় তিনটি ক্যাফেটেরিয়া থাকবে। থাকবে ৯০ আসনবিশিষ্ট ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়া, উন্নত লন্ড্রি হাউসসহ কার পার্কিংয়ের সুবিধা। থাকবে ভিভিআইপি এলিভেটরসহ ১৬টি এলিভেটর ও একটি এস্কেলেটর, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাপনা, হিটিং, ভেন্টিলেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সম্পূর্ণ আইটি বেইজড হাসপাতাল : থাকছে মেগা হসপিটাল ইনফরমেশন সিস্টেম, যার আওতায় কাটিং এজ ইনফরমেশন সিস্টেমসহ নানাবিধ সুবিধা থাকবে। অটোমেটেড হসপিটাল ইনফরমেশন সিস্টেমের আওতায় ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগীরা প্রয়োজনীয় ওষুধও পাবে।
আসছে ফেইজ টু প্রজেক্ট : জানা গেছে, এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পর কোরিয়ান অর্থায়নে ফেইজ-২ প্রকল্প নির্মাণের প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। শাহবাগের বাংলাদেশ বেতার ভবনের যে জায়গাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে, সেখানে এক হাজার ২০০ বেডের হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে, যাতে ব্যয় হবে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। সেখানে থাকবে চক্ষু, দন্ত, চর্ম ও যৌন, মেডিসিন, বক্ষব্যাধি, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন, জেনারেল সার্জারিসহ আরো অনেক সেন্টার। অর্থাৎ পরিপূর্ণ বঙ্গবন্ধু স্পেশালাইজড হাসপাতালে জনগণ পাবে ১০টি সেন্টারের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা।
হাসপাতালটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান বলেন, ‘থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কোরিয়াসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে সেন্টার বেইজড চিকিৎসাসেবা চালু থাকলেও বাংলাদেশে এত দিন তা ছিল না। আমরা আশা করছি, এটি চালু হলে বিএসএমএমইউর শিক্ষা, চিকিৎসা এবং গবেষণা কার্যক্রম আরো গতিশীল ও উন্নত হবে। দেশের রোগীদের বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে; সর্বোপরি তুলনামূলক সাশ্রয়ী খরচে বা স্বল্প ব্যয়ে দেশেই উন্নত চিকিৎসাসেবা রোগীদের প্রদান করা সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই হাসপাতালটি করপোরেট সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বাংলাদেশের প্রথম করপোরেট সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে পরিণত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, পুরোপুরি কাজ শেষ হতে আরো কয়েক মাস সময় লাগবে। আশা করা যায় চলতি বছরই এ হাসপাতালটি চালু হবে।