দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ

সংবিধান সংস্কার

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অর্জন হিসেবে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিস্বরূপ সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, দেশের সাংবিধানিক নাম এবং সংসদীয় কাঠামোতে পরিবর্তনের মতো সুপারিশ রয়েছে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। পরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে তাদের সুপারিশগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

আলী রীয়াজ বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের যে জনআকাঙ্ক্ষা; তার প্রতিফলন হিসেবে আমরা রাষ্ট্রের পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করছি। সেগুলো হচ্ছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র।

বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে।

সেই মূলনীতির আলোকে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা করা হবে- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত’ করাকে রাষ্ট্রের লক্ষ্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে সংবিধানে।

বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ সুপারিশ প্রতিবেদন করার কথা প্রকাশ করেন সংস্কার কমিশনের প্রধান।

আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে আসলে যে প্রজাতন্ত্রের কথা হয়, সেটায় আমরা দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের পরিচিতি হওয়া উচিত ‘জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ হিসেবে।

মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণের বিষয়ে সুপারিশ করার কথা তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের শিক্ষক আলী রীয়াজ বলেন, শুধু তাই নয়, আমরা সাংবিধানিকভাবে তার সুরক্ষা এবং তা যেন বলবৎযোগ্য হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য একটা সমন্বিত একক সনদের কথা বলেছি।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রস্তুত করতে গিয়ে প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত নেওয়ার কথা জানান আলী রীয়াজ। কমিশনের সদস্যদের পাশাপাশি ৩২ জন গবেষক এতে কাজ করেছেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এই প্রতিবেদনের পেছনে আছে প্রায় এক লাখ লোকের মতামত; রাজনৈতিক দলগুলোর অবদান, আছে নাগরিক সমাজের অবদান এবং আছে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের মত।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল সুস্পষ্ট- কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা। সেদিক থেকে বিবেচনা করে আমরা সংবিধানের যে ধারাগুলোর, যে বিষয়গুলোর সংস্কার করা দরকার সেগুলো আমরা বলেছি।

সুপারিশগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যের আশা করে তিনি বলেন, একটা ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় আজকে আসলে কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা এই প্রস্তাবগুলো, সুপারিশগুলো রাখছি। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এক ধরনের ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে।

সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের পুনরুদ্ধার বা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা সুপারিশে তুলে ধরার কথা জানান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালুর প্রস্তাব করার কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, এ দুই কক্ষ মিলে যাতে সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকে, তার জন্য একইসঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিম্নকক্ষ, কিন্তু সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে উচ্চকক্ষ তৈরি করার জন্য সুপারিশ করেছি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.