দৃশ্যমান হলো ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
দৃশ্যমান হয়েছে দেশের প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে চলছে বিরতিহীন কর্মযজ্ঞ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ঢাকা শহরের উত্তর ও দক্ষিণাংশের সংযোগ সহজ হবে, ট্রাফিক ধারণ ক্ষমতা বাড়বে, যাত্রার সময় কমবে এবং এ পথে ভ্রমণ আরামদায়ক হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বিমানবন্দর, বনানী, মহাখালী অংশের প্রকল্পের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়েছে। তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর ও সায়েদাবাদ অংশের কার্যক্রম চলছে।
জানা গেছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুরু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কুতুবখালীতে শেষ হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আনোয়ার হোসেন বলেন, বিরতিহীনভাবে চলছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি নির্মাণের সুবিধার্থে তিনটি ট্রাঞ্চে ভাগ করা হয়েছে। ট্রাঞ্চ-১. এয়ারপোর্ট-বনানী-রেলস্টেশন পর্যন্ত। ট্রাঞ্চ-২. বনানী রেলস্টেশন-মগবাজার পর্যন্ত। ট্রাঞ্চ-৩. মগবাজার-চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত। প্রথম ধাপের নির্মাণ কাজের ১ হাজার ৫০০টি পাইলের মধ্যে ১ হাজার ৩৪০টি পাইল, ৩৫০টি পাইলক্যাপের মধ্যে ৩২৪টি পাইলক্যাপ, ৩৫০টি কলামের ২৩৯টি কলাম, ৩৫০টি ক্রসবিমের মধ্যে ১২৮টি সম্পন্ন হয়েছে। ৩ হাজার ১৫৪টি আইগার্ডারের মধ্যে ২২৪টি সম্পন্ন হয়েছে যার বাস্তব অগ্রগতি ৫৬ শতাংশ।
ট্রাঞ্চ ২ ও ট্রাঞ্চ ৩-এর প্রস্তুতিমূলক কাজের অংশ হিসাবে ওয়ার্ক শেড নির্মাণ, মিক্সিং প্ল্যান্ট নির্মাণ, লেবার শেড এবং সয়েল ইনভেস্টিগেশনের কাজ চলছে। প্রথম ধাপে এক্সপ্রেসওয়েটি বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বনানী পর্যন্ত যাবে। এ রুটের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। পাইল ক্যাপও বসে গেছে। এখন পাইল ক্যাপের ওপর দিয়ে বসানো হচ্ছে আই গার্ডার। এরপরই আই গার্ডারের ওপরে বসবে স্ল্যাব। স্ল্যাবের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে চলাচল করবে যানবাহন।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক হিসাবে কাজ করবে। এটি হেমায়েতপুর-কদমতলী-নিমতলী-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলোও ঢাকাকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। ফলে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট কমবে।
সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) তথ্যানুযায়ী, এক্সপ্রেসওয়েটিতে ১১টি টোল প্লাজা থাববে। যার পাঁচটিই এক্সপ্রেসওয়ের উপরে। এর উপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। যোগাযোগ ব্যয় ও ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। কমবে ভ্রমণের সময় ও খরচও। যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি এ প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।