দক্ষিণে পর্যটনের বিশাল ভাণ্ডার, আছে সীমাবদ্ধতাও

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদসহ অসংখ্য পুরাকীর্তি, দৃষ্টি নন্দর স্থানসহ নানা স্থাপনা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গপসাগরের কোল ঘেঁষে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সুন্দরবন এই অঞ্চলে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এ অঞ্চলে ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো অ্যাডভেঞ্চার। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদের পাশাপাশি এ অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য পুরাকীর্তি, দৃষ্টি নন্দর স্থানসহ নানা স্থাপনা।

শীত মৌসুম এলেই ভ্রমণ পিপাসুদের ডাকতে থাকে প্রকৃতি। প্রতি বছরই এই সময়ে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ঘিরে ব্যস্ততা বাড়ে ট্যুর অপারেটরদের। সমুদ্র দিয়ে পাড়ি দেওয়ার জন্য নতুন করে সাজে লঞ্চসহ নানারকম নৌযান। তবে দীর্ঘদিনেও এখানে গড়ে ওঠেনি পর্যটন নগরীর সুযোগ সুবিধা। এখানে সম্ভাবনা থাকলেও রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্টদের সঠিক পরিকল্পনায় এ অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্র থেকে নতুন অর্থনীতির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

করমজল, হাড়বারিয়া, কটকা, কচিখালি, দুবলারসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেতে হয় নদীপথে। যেখানে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি পাখ-পাখালি, হরিণ, কুমির, বানরসহ নানা রকম বন্যপ্রাণীতে রোমাঞ্চিত হন পর্যটকরা। ভাগ্য সহায় হলে মিলতে পারে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা।

পরিবারসহ তিনদিনের জন্য কুমিল্লা থেকে সুন্দরবনে ভ্রমণে এসেছেন শায়লা আক্তার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্য যে কোনো পর্যটন এলাকা থেকে সুন্দরবন সবথেকে আলাদা। এখানে প্রকৃতির একদম কাছে চলে আসা যায়। সুন্দরবন ভ্রমণের সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় অ্যাডভেঞ্চার। আমরা দারুণ উপভোগ করছি।

ঢাকা থেকে একটি প্রাইভেট কোম্পানির ২০ জনের একটি দল সুন্দরবনে ভ্রমণ করছিলেন। প্রতিনিধি দলের সদস্য রাফায়েত হোসেন বলেন, ‘আমি দেশের এবং দেশের বাইরে বহু স্থানে ভ্রমণ করেছি। তবে সুন্দরবন একেবারেই আলাদা। এখানে আসলে যে কারও মন ভালো হবেই। চারিদিকে এত পাখির কিচির মিচির, এত সবুজ। নদীর মাঝ দিয়ে প্রকৃতির দেখা। নদীর পাড় থেকে হরিণের দলের একসঙ্গে ছুটে চলা। সব কিছুই দারুণ।’

রাফায়েত আরও বলেন, ‘শুধু সুন্দরবন নয়, এ অঞ্চলের বিশ্ব ঐতিহ্য বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদও। রয়েছে জাহান আলী মাজার, অযোধ্যা মঠসহ অসংখ্য দৃষ্টি নন্দন স্থান, পুরাকীর্তি। অপরূপ এসব সৌন্দর্যের টানে ভ্রমণ পিপাসুরা এ অঞ্চলে আসেন। পর্যটকদের চাহিদা থাকলেও একসঙ্গে একাধিক পর্যটক কেন্দ্র ভ্রমণের জন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠেনি এ অঞ্চলে। এ ছাড়া ভ্রমণে এসব স্থানে অনুন্নত সড়ক ব্যবস্থা, নদী পথে পন্টুন সংকট, প্রাথমিক চিকিৎসা, নিরাপদ আবাসন সংকটে প্রসার ঘটেনি পর্যটনের।’

সুন্দরবন ভ্রমণে আসা আরেক পর্যটক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘সবকিছুই দারুণ, তবুও কিছু কমতি আছে। সুন্দরবনে আসার পথে সড়ক পথটা খুবই নাজুক ছিলো। এখানকার আবাসন সুবিধাও খুব একটা ভালো না। এখান থেকে ফিরে ষাট গম্বুজ বা অন্য কোথাও যাবো, তেমন সুযোগও নেই। এগুলো নিয়ে একটা বড় ধরনের প্ল্যানিং দরকার।

এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে জানান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘এ অঞ্চলের অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো নিয়ে সরকারের খুব একটা ভাবনা নেই। বন বিভাগ কিছু কিছু কাজ করলেও তা অপ্রতুল। সুন্দরবনে যাওয়ার পথে সড়ক পথ অনুন্নত। নদী পথে যাতায়াতের জন্য নৌযান ভেড়ার ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না। ফলে অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন। পর্যটন খাতের এসব সমস্যা সমাধানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, ‘খুলনা অঞ্চলে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। সেসব পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে সুন্দরবন অবশ্যই সবথেকে এগিয়ে। এ ছাড়া ষাট গম্বুজ মসজিদ খান জাহান আলী মাজার, অযোধ্যা মঠসহ পুরাকীর্তিও অনেক রয়েছে এ অঞ্চলে। তবে এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক বাড়াতে উদ্যোগ নেই খুব একটা। এ জন্য শুধু বন বিভাগ একা কাজ করলে হবে না। সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। তাতে এ অঞ্চলের পর্যটন খাত থেকে নতুন অর্থনীতির সম্ভাবনা দেখা দেবে।’

বন বিভাগ সূত্র জানায়, পরিবেশ বান্ধব ইকো ট্যুরিজমের জন্য নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। আমরা এখন পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের দিকে এগোচ্ছি। এজন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমরা নতুন কিছু পন্টুন ক্রয় করেছি। নতুন চারটি ইকো টুরিজম সেন্টার চালু হয়েছে। আরও কিছু পরিকল্পনা আছে আমাদের। আশা করছি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে এখানে পর্যটক আরও বাড়বে।

প্রতি বছর গড়ে দুই লাখেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন; যা থেকে রাজস্ব আয় হয় ৪ কোটি টাকারও বেশি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.