তিন বিতর্কিত নির্বাচন: আতঙ্কে সেই ডিসিরা

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিতর্কিত তিনটি নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনগুলোতে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৬৬ জন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মধ্যে ৪৫ জনকে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) এবং ২১ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব কর্মকর্তা এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ‘একতরফা’ ওই নির্বাচনে মোট ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করে। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরা। ওই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের (একাদশ জাতীয় সংসদ) মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসনে জয় পায়। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি আসন। বাকি তিনটি আসন পায় বাকি দলগুলো। এ নির্বাচনেও ক্ষমতার অপব্যবহার, জালজালিয়াতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ‘দিনের ভোট রাতে করার’ অভিযোগ আনা হয়।

তিনটি নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয় ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ৬৬ জন সাবেক রিটার্নিং অফিসারের (জেলা প্রশাসক) বিরুদ্ধে।

সূত্র বলছে, নির্বাচনে অনিয়মের সহযোগিতা ছাড়াও তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

এসব নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয় ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ৬৬ জন সাবেক রিটার্নিং অফিসারের (জেলা প্রশাসক) বিরুদ্ধে।

সূত্র বলছে, নির্বাচনে অনিয়মের সহযোগিতা ছাড়াও তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে সাবেক এসব ডিসি বর্তমানে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম করে কেউ অবসরে গেলেও শাস্তি থেকে রেহাই পাবেন না। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে সেগুলো দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে। এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হতে পারেন। এ কারণে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

৪৫ ডিসিকে ওএসডি:বিতর্কিত নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ৩৩ জন ডিসিকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়। একই কারণে ১২ জন কর্মকর্তা এর আগেই ওএসডি হন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ওএসডি হওয়া ৩৩ কর্মকর্তা হলেন— বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের পরিচালক (যুগ্মসচিব) হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এস এম আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মিজানুর রহমান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মাহমুদুল কবীর মুরাদ।

 

 

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.