ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ-বিমান ভাড়া কমল
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ ও বিমানে যাত্রীচাপ কমেছে। তাই যাত্রী টানতে সেতু উদ্বোধনের সপ্তাহের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী ভাড়া কমিয়ে দেয় কোনো কোনো লঞ্চ কোম্পানি।
তবে কুরবানির ঈদের পর প্রায় প্রতিটি লঞ্চ কোম্পানি ভাড়া কমিয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ভাড়া কমানোর ঘোষাণা আসেনি। এদিকে যাত্রী ধরে রাখতে ঢাকা-বরিশাল রুটে বিমান ভাড়া এক হাজার টাকা কমেছে।
সোমবার বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার এই রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা নির্ধারণের কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে। এর আগে এই রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এদিকে ইউএস-বাংলা বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নভোএয়ারের মতো ভাড়া নির্ধারণ করেছে। তবে বিমান বাংলাদেশ তাদের ভাড়া কমায়নি। তারা ভাড়া নিচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে।
বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, যাত্রীরা সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৪৯৯ টাকায় বরিশাল থেকে ঢাকা অথবা ঢাকা থেকে বরিশালে ভ্রমণ করতে পারবেন। নভোএয়ার প্রতিদিন ঢাকা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টায় বরিশালের উদ্দেশে এবং বরিশাল থেকে ৪টা ৪০ মিনিটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর নৌরুটে যাত্রীচাপ কমতে থাকে। তবে কুরবানির ঈদের সময় চাপ দেখা যায়। কিন্তু ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার পর এখন আবার যাত্রীচাপ কমে যাচ্ছে। তাই পরিস্থিতি আগের জায়গায় ফিরে আনতে চেষ্টা করছেন মালিকরা।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গত বছরের নভেম্বরে লঞ্চগুলোর ডেকের ভাড়া ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা করা হয়। সেখানে যাত্রীসংকটে কোনো ঘোষণা ছাড়াই লঞ্চগুলো এখন ডেকের ভাড়া ২০০ টাকা, আবার কেউ কেউ ১৫০ টাকা নিচ্ছে। ডেকের পাশাপাশি কেবিনের ভাড়াও কমানো হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
১২০০ টাকার কেবিন এখন এক হাজার এবং ডাবল কেবিনে ২ হাজার ৪০০ টাকার স্থলে দুই হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। লঞ্চ স্টাফরা জানান, পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী তিন ভাগের একভাগে নেমে এসেছে। তাই প্রায় প্রতিটি লঞ্চোর ভাড়া কমানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্র্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার নেতারা।
বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী কয়েকটি লঞ্চের সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ক্রমান্বয়ে কমছে লঞ্চের যাত্রী। অনেক লঞ্চের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কেবিন খালি থাকছে। তাই মালিকরা যে যার মতো করে ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন।
বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির মালিক মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস বলেন, ঈদ শেষ হয়েছে। চলতি মাসে আমাদের মালিক সমিতির মিটিং আছে। সেখানে একশ টাকা করে হলেও ভাড়া কমানো হবে। এখনই প্রায় সব লঞ্চে ভাড়া কম নেওয়া হচ্ছে। তবে তেলের দামের ওপর নির্ভর করবে লঞ্চ ভাড়া কমনো হবে কি না।
সুরভী লঞ্চের পরিচালক রিয়াজ-উল কবির বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে আমরা ভাড়া কমিয়ে দিয়েছে। এখন নন এসি ডবল কেবিন ২ হাজার টাকা ও সিঙ্গাল কেবিন ১ হাজার টাকায় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এসি ডাবল কেবিন ২ হাজার ২০০ টাকা ও সিঙ্গাল কেবিন ১ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সুন্দরবন লঞ্চের মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, অনেক লঞ্চ মালিক ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন। ঈদের পর যাত্রীচাপ কমে গেলে সবাই ভাড়া কমিয়ে দেবে। পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী একটু কমেছে। তিনি বলেন, লঞ্চে পরিবার-পরিজন ও মালপত্র নিয়ে শান্তিতে যাওয়া যায়। বাসে সেটা সম্ভব না। তাই লঞ্চ যাত্রীরা আবার ফিরে আসবে বলে আশা করছি।