ডিসেম্বরে নির্বাচন, সংস্কার এই সময়ের মধ্যেই করতে হবে: পুলিশ কর্মকর্তাদের ড.ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করে এসছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কি কি সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে। সোমবার(১৭ মার্চ) মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশ বদলাতে হলে একক নির্দেশে নয়, বরং সবাইকে নিয়ে এক একটি টিম হয়ে কাজ করতে হবে এবং বাংলাদেশে যত টিম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিম হলো পুলিশ।

পুলিশের উদ্দেশ্যে ড. ইউনূস বলেন, আপনারাও সংস্কারের কথা বলেছেন। কারো জন্য অপেক্ষা করে কোনো ফায়দা হবে না। কাজটা করতে হবে এবং সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সরকার যা কিছুই করতে চায়, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। তারা সব করে দেয় না, তারা পরিবশেটা সৃষ্টি করে। যে পরিবেশটা না থাকলে কোনো কাজই আর হয় না।

ড. ইউনূস বলেন, পুলিশের কথা প্রসঙ্গে বারবার আমরা দুটো শব্দ বলছি—আইন ও শৃঙ্খলা। পুলিশের হাতেই এটাকে এক্সিকিউট করতে হবে। এই পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে সরকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের অধিকার, নাগরিকের অধিকার—কিছুই থাকে না। আমরা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই বাকি জিনিসগুলো হয়। আইনশৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনো কাজে আসবে না।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করতে পুলিশের অত্যন্ত বেগ পেতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।

ড. ইউনূস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে আমরা মস্ত বড় সুযোগ পেয়েছি। এটাকে যেন হারিয়ে না ফেলি। আমরাও সেটা চেষ্টা করব, ভবিষ্যতে যারা আসবে তারাও আশা করি চেষ্টা করবে। পথটা যেন আমরা সৃষ্টি করে দেই।

এই পথ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ‘পুলিশ বাহিনী একটা মস্ত বড় ভূমিকা’ পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, লণ্ডভণ্ড অবস্থার মধ্যে আমরা এই যাত্রা শুরু করলাম। সারা দুনিয়ার যত দেশ আছে, সবাই আমাদেরকে সমর্থন করল। শুধু মিনমিনে সমর্থন না। উৎসাহ ভরে এগিয়ে এলো। তারা মনে করেছে, এই দেশ উঠে দাঁড়াতে পারলে ভালো সঙ্গী হবে সবার। আমাদের উপরে তারা ভরসা করে।

একইভাবে নিজেদের ওপর ভরসা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, নতুন বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর মুশকিল হলো, ওই অন্ধকার যুগে তারা একটিভ পার্টিসিপেন্ট ছিল—নিজের ইচ্ছায় না, সরকারি কাজ করতে গিয়ে হয়েছে। কাজেই নতুন বাংলাদেশে পুলিশকে দেখিয়ে দিতে হবে—আমরা মানুষ খারাপ না, খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম, সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। দেখো আমরা কি করতে পারি। কাজের মাধ্যমে আমরা দেখাবো যে, আমাদের হাত দিয়েই এই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে। আমরা বড় রকম ভূমিকা পালন করব। কারণ আমাদের কাছেই রয়েছে আইন ও শৃঙ্খলা—এটা প্রতিষ্ঠা করব।

ড. ইউনূস বলেন, পুলিশ হব বন্ধু। কারণ, আমি আইনের পক্ষের মানুষ। আমি আইন প্রতিষ্ঠা করার মানুষ। আইন হলো আমাদের সবার আশ্রয়। পুলিশ হলো আশ্রয়দাতা। আমরা এই ইমেজটা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, মানুষ অতীতের সব কথা ভুলে যাবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৬ বছরের ইতিহাস আমরা বদলাতে পারবো না। ১৬ বছরের কালিমা সারা গায়ে মাখা আছে, রাতারাতিটা সেটা পাল্টাতে পারবো না। একজন মানুষ হিসেবে আমি কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারি, সম্পূর্ণ নতুন ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি। নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী হিসেবে আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। অতীত নিয়ে কান্নাকাটির দরকার নেই। নতুনের জন্য আমরা প্রস্তুত এবং এটা করে দেখাব।

ড. ইউনূস বলেন, পুলিশ সম্বন্ধে ইমেজ হলো, তারা খারাপটাই আগে দেখে, খারাপটা আগে করে। কিন্তু আমরা ভালোটা আগে দেখব, ভালোটা আগে করব। দু-একজন করাপ্ট হলে বাহিনী পালটায় না। বাহিনী সামগ্রিকভাবে একটা কাঠামো এবং এই কাঠামোর অনেক শক্তি।

পুলিশকে নতুন শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, মানুষকে বাধা দেবো না। তার পথকে সহজ করব। তার পাশে থাকবো। তাহলে দেখব যে, এ দেশের কোনো সমস্যা হবে না। শুধু মানুষের পাশে থেকে তাদের আইনের ভেতরে রাখতে হবে। তাকে বলতে হবে, আইনের ভেতরে থাকেন, আপনার যা দরকার আমি করে দেবো।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।

মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ ও রাজশাহী পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।

You might also like

Comments are closed.