ডালের বড়ি বানিয়ে স্বাবলম্বী ১০ পরিবার!

নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় ডালের মিশ্রণে বড়ি তিরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ১০টি পরিবার। আগে শীতকালে এই খাদ্য পণ্যটির চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে সারাদেশে চাহিদা বাড়ায় এখন পুরো বছরই বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন তারা।

সরেজমিনে উপজেলার কলম পুন্ডরী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাংকর ও মাসকলাই, খেসারির ডালের সঙ্গে সামান্য মসলা দিয়ে বানানো হচ্ছে বড়ি। এই সুস্বাদু খাবারটি তৈরিতে নারীদের পাশাপাশি কাজ করছেন পুরুষরাও। সবাই বড়ি বানিয়ে টিনের পাতে ও বাড়ির আঙ্গিনায় রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। শুকিয়ে গেলে বড়িগুলো প্যাকেট করে স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা।

কারিগররা জানান, প্রথমে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ডাল পানিতে ভেজাতে হয়। এরপর মেশিনে ভাঙ্গিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তারপর মিশ্রণে বড়ির উপকরণ তৈরি হয়। পরে বাড়ির আঙিনার খোলা জায়গায় বসে বড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। টিন বা পাতলা কাপড়ে এটি রোদে রাখা হয় শুকানোর জন্য। দুই থেকে তিন দিন টানা রোদে শুকাতে হয়। অতপর বিক্রির উপযোগী হয়।

তারা আরো জানান, বোয়াল, বড়ি দিয়ে রান্না করা বাইম, কৈ, শিং বা শোল মাছের ঝোল বেশ মুখরোচক ও জনপ্রিয় খাবার।

বড়ি তৈরির কারিগর পূন্ডরী গ্রামের রাশেদা বেগম বলেন, ৮ বছরের অভিজ্ঞতা আমার। মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয় বড়ি বিক্রি করে। এই টাকা দিয়ে পরিবার ও নিজের চাহিদা পূরণ করি।

তিনি আরো জানান, আমাদের দেখে এলাকার ১০টি পরিবার এখন এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বড়ি বানানোর ধুম পড়ে যায়। তবে চাহিদা থাকায় এখন সারা বছর বড়ি তৈরির কাজ চলে। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নাটোর, বগুড়া, রাজশাহী ও ঢাকায় বড়ি সরবরাহ করা হয়।

কারিগর আলামিন শাহ ও মীর নাছির জানান, ১৫ বছর ধরে এই পেশায় আমরা। আমরা প্রতিকেজি বড়ি বাজারে ১২০-১৫০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে আমাদের কাছ থেকে বড়ি কিনে নিয়ে যান।

বগুড়া জেলা থেকে বড়ি কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী মিলটন আলী। তিনি বলেন, ‘এখানকার বড়ি যেমন নরম, তেমনি খেতেও বেশ ভালো। একবার যে এটি খায়, পরেরবার আবার খুঁজে কিনে নিয়ে যায়। আমার কিছু নিজস্ব খরিদ্দার আছেন, যাদের প্রধান পছন্দ এখানকার বড়ি। অন্য বড়ি কম দামে পাওয়া গেলেও নিতে চান না গ্রাহকরা। তাই বাধ্য হয়ে তাদের জন্য এখান থেকেই নিয়ে যাই।’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.