ঠাণ্ডায় জমে মৃত্যু গাজার বাস্তুচ্যুত নবজাতকের

ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুতদের একটি আশ্রয় শিবিরে তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে ভারি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত এক পরিবারের যমজ দুই নবজাতকের একজন হাইপোথার্মিয়ায় মারা গেছে, অপর শিশুটিও সঙ্কটজনক অবস্থায় আছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় ভোরে ইয়াহিয়া আল-বাতরান ও তার স্ত্রী নৌরা তাদের নবজাতক যমজ দুই ছেলে জুমা ও আলিকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করছিল। এক মাস বয়সী ওই দুই ভাই শিবিরের অস্থায়ী তাঁবুতে একইসঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল।

আগের দিন তীব্র শীতের মধ্যেই পুরো এলাকাজুড়ে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে তাঁবুর মধ্যে পানি জমে দুর্দশার চরম হয়েছে। কিন্তু এরপরে যা ঘটেছে তা আরও মারাত্মক।


দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে একটি তাঁবুর মধ্যে শীতে জবুথবু একজন নারী ও তার সন্তানরা। ছবি : সংগৃহীত

আল-বাতরান রয়টার্সকে বলেন, সে (নৌরা) জানায়, সে জুমাকে জাগানোর অনেক চেষ্টা করছে, কিন্তু ওর ঘুম ভাঙছে না। আমি তখন আলির কথা জিজ্ঞেস করলাম আর সে জানালো, সেও উঠছে না। আমি জুমাকে তুলে ধরলাম, তার মুখ সাদা আর সে তুষারের মতো জমে গেছে, যেন বরফ, জমাট।

একমাস বয়সী জুমা হাইপোথার্মিয়ায় মারা গেছে। চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েকদিনে গাজায় শীতে জমে ছয় ফিলিস্তিনির শিশুর মৃত্যু হয়েছে, জুমা তাদের একজন।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আলি সঙ্কটজনক অবস্থায় ছিল।

গাজায় যুদ্ধের মধ্যে এটি দ্বিতীয় শীত ঋতু। ভূখণ্ডটির লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির জন্য এই আবহাওয়া আরও দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। আর এদিকে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে।

জুমা আল-বাতরানের মৃত্যু দেখিয়েছে ঝুঁকির মুখে থাকা গাজার উদ্বাস্তু পরিবারগুলো কী মারাত্মক পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, খাবার, পানি, চিকিৎসা উপকরণ ও আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য সরবরাহ বহন করা হাজার হাজার ট্রাককে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে তারা। কিন্তু আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি বাহিনীগুলো ত্রাণ বিতরণে বাধা দিয়ে গাজার মানবিক সংকটকে আরও নাজুক করে তুলছে।

ইয়াহিয়া আল-বাতরানের পরিবার যুদ্ধের প্রথমদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়া থেকে পালিয়ে এসেছিল। তখন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মধ্য গাজার বালিয়াড়ি ও ছোট ছোট ঝোঁপঝাড়ে ভরা খোল জায়গা আল-মাঘাজিকে ‘মানবিক অঞ্চল’ বলে ঘোষণা করেছিল। আল-বাতরানের পরিবারে এসে এখানেই আশ্রয় নিয়েছিল।

পরে আল-মাঘাজি ক্রমাগতভাবে অনিরাপদ হয়ে ওঠার পর তারা নিকটবর্তী দিয়ের আল-বালাহ শহরের আশ্রয় শিবিরে চলে যায়।

You might also like

Comments are closed.