অফুরন্ত রহমত, বরকত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে শুরু হয়েছে— মাহে রমজান। পবিত্র এই মাস মানব জাতিকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। কিন্তু এই রমজানকে ঘিরেই মাসব্যাপী সন্ধ্যাকালীন রেল যাত্রায় চলে সাহরি ও ইফতার বাণিজ্য। যেখানে, ইফতার ও সাহরি বিক্রি হয় উচ্চমূল্যে। ফলে, বিত্তবানরা রেলের এই ইফতার-সাহরির প্যাকেজ কিনে খেতে পারলেও, নাগালের বাইরে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। বাধ্য হয়েই তাদের কিনে খেতে হয় কলা-রুটি!
শনিবার (১ মার্চ) রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হওয়া পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে এই দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে সাহরি ও ইফতার প্যাকেজের দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। ফলে, বাধ্য হয়েই অনেক যাত্রীকে স্টেশনের পাশে থাকা দোকান থেকে কলা-রুটি বা কেক কিনে সাহরি করতে হচ্ছে।
যাত্রীদের অভিযোগ—রেলের ভ্রাম্যমান ক্যান্টিনে যে প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ২০০-২২০ টাকায় খুবই নিম্নমানের খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। ওই প্যাকেজে রয়েছে এক টুকরো ব্রয়লার মুরগির মাংস, কিছু সবজি, ডাল এবং ভাত। তবে এই খাবারের পরিমাণ অত্যন্ত কম এবং মানও সন্তোষজনক নয়।
সিফাত আলম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘ট্রেনের খাবারের দাম খুব বেশি। প্রথম সাহরি ছিল, কোনো প্রস্তুতি ছিল না, তাই ট্রেনের খাবার খেতে হয়েছে। কিন্তু খাওয়া এবং দাম দেখে খুবই অবাক হয়েছি। ট্রেনের টিকিটের মূল্যের চেয়ে খাবারের দাম অনেক বেশি। ফলে, বাধ্য হয়েই আমি কেক খেয়েই সাহরি করেছি।’
আব্দুল হাকিম নামে এক যাত্রী জানান, ‘ট্রেনে যেই খাবার বিক্রি হচ্ছে, প্রায় একই খাবার বাইরে কিনতে গেলে ১৫০ টাকার মধ্যে চলে আসবে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ খাবারের দাম এমনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে যে নিম্নবিত্তদের জন্য এটি একদমই সহনীয় নয়।’
একই অভিযোগ জানিয়েছেন রাজশাহীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে আসা দুই যাত্রী। তারা বলছেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত মানুষ, অনেক কিছু এড়িয়ে চলতে হয়। ট্রেনের খাবার এড়িয়ে আমরা ৪টা কলা আর কেক কিনে সাহরি করেছি।’
রেলওয়ের ক্যান্টিন পরিচালনাকারীরা জানিয়েছেন, এই খাবারের মূল্য তালিকা এবং মেন্যু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষই নির্ধারণ করেছে। তবে, তারা জানায়, যদি কর্তৃপক্ষ মানবিক সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তারা তাতে সাড়া দেবেন।
রেলওয়ের মূল্য তালিকায় দেখা যায়, সাহরিতে দুই ধরনের প্যাকেজ রয়েছে—একটিতে ২০০ গ্রাম ভাত, ১২৫ গ্রাম রুই মাছ, ১২৫ গ্রাম সবজি ও ১ কাপ ডাল দেওয়া হয় ২০০ টাকায়, আর অন্য প্যাকেজে ২০০ গ্রাম ভাত, ১২৫ গ্রাম মুরগি, ১২৫ গ্রাম সবজি ও ১ কাপ ডাল ২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে মাছের প্যাকেজটি সাহরির প্রথম দিনে পাওয়া যায়নি। ২০০ টাকার এই প্যাকেজের সাথে ২০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে খাবার পরিবেশনের জন্য।
এছাড়া, ইফতারের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস যেমন পেয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, আলুর চপ, ছোলা, মুড়ি, শসা, এবং খেজুরের একটি প্যাকেজের দাম রাখা হয়েছে ১২০ টাকা।
যাত্রীরা জানান, খাবারের পরিমাণ ঠিক থাকলেও, মান ভালো থাকে না। এ ব্যাপারে রেলওয়ের কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা অনুরোধ জানিয়েছেন, অন্তত রমজান মাসে রেলওয়ের সাহরি ও ইফতার প্যাকেজের দাম সহনীয় রাখতে হবে।
পশ্চিম রেলওয়ের জিএম মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি জানার পর আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’