টেলি সামাদের অজানা তথ্য

অভিনয়শিল্পী টেলি সামাদ। ‘কৌতুক অভিনেতা’ হিসেবেই যার ব্যাপক পরিচিতি। ১৯৭৩ সালে নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘কার বৌ’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তারপর পাঁচ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অভিনয় জীবনে প্রাপ্তির খাতায় টেলি সামাদের কোনো অপূর্ণতা ছিল না। দর্শক প্রশংসার পাশাপাশি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। ২০১৯ সালে অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। দেশের সংস্কৃতির আকাশে হিরণ্ময় দ্যুতিতে দীপ্যমান নক্ষত্রপ্রতিম এই অভিনেতার প্রয়াণ—এক অপূরণীয় ক্ষতি।

দর্শক টেলি সামাদকে ‘অভিনেতা’ হিসেবেই মনে রাখবেন। কিন্তু তার বাইরেও বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। যা অনেকের কাছে অজানা। চলুন, জেনে নেয়া যাক কিছু অজানা তথ্যঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলি সামাদের অভিনয় দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে অভিনয়ে ফিরেছিলেন টেলি সামাদ। সেই ঘটনা বর্ণনা করে এ অভিনেতা বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন আমাকে অভিনয়ে ফিরতে বললেন, তখন আমি ম্যাডামকে বলেছিলাম, ‘আমি আর অভিনয় করব না।’ তখন ম্যাডাম বললেন, ‘আমি চীন মৈত্রীতে তোমার অভিনয় দেখে হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছিলাম। কী সুন্দর তোমার অভিনয়। তুমি শিগগির আবার অভিনয় শুরু করো।’ আমি তখন বলেছিলাম, ‘ঠিক আছে ম্যাডাম আমি অভিনয়ে ফিরব।’

সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ টেলি সামাদের চচা। ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন টেলি সামাদ। তার বড় ভাই চারুশিল্পী আব্দুল হাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন এই কৌতুক অভিনেতা।

আব্দুস সামাদ থেকে কীভাবে টেলি সামাদ হলেন? এ প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেতা বলেছিলেন, ‘একদিন সকাল ১০টায় আমাকে বিটিভি থেকে টেলিফোন করে ডাকলেন। বিটিভি অফিসে যাওয়ার পর বিটিভির জিএম, পরিচালকসহ টেলিভিশনের বেশ কয়েকজন আমাকে নিয়ে বসলেন। তারা আমাকে বললেন, ‘তোমার বাবা তোমার নাম রেখেছেন আব্দুস সামাদ। ‘আব্দুস’ শব্দটা বাদ দিয়ে ‘টেলি সামাদ’ রাখতে চাই। এই টাইটেল তুমি ছাড়া আর কাউকে দিতে পারি না। তুমিই এই নামের যোগ্য। তোমার ভেতরে এ রকম ট্যালেন্ট আছে।’

চলচ্চিত্রের পর্দায় নায়কের চরিত্রেও অভিনয় করেছেন টেলি সামাদ। কৌতুক অভিনেতার নায়ক হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘কাজী হায়াৎ আমাকে নায়ক বানানোর জন্য অনেকবার বাসায় এসেছেন। আমি রাজি হইনি। শেষ পর্যন্ত আমাকে দিয়ে যেন কাজ না করান এজন্য টাকা বেশি চেয়েছিলাম। কিন্তু কাজী হায়াৎ তাতেও রাজি হয়ে যান। এরপর ‘দিলদার আলী’ সিনেমায় কাজ করি। এতে আমার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন জুলিয়া। সিনেমাটি হিটও হয়েছিল। এরপর আরো তিনটি সিনেমায় নায়কের চরিত্রে কাজ করি।’

টেলি সামাদ অভিনয়শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হলেও পঞ্চাশের অধিক সিনেমায় গান গেয়েছেন। একটি অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছিল তার। নন্দিত এই শিল্পীর তিনটি ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত‌্যু তাতে বাধ সাধে। তার পূরণ না হওয়া ইচ্ছাগুলো নিয়ে এই অভিনেতা বলেছিলেন—‘আমার তিনটি ইচ্ছে আছে। এক. আমার খুব ইচ্ছে টেলিভিশনে আবার গান করার। নিজের গানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের জনপ্রিয় শিল্পীদের গানগুলো করব। দুই. একটি সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিনয় করব। আর এ সিনেমার মাধ‌্যমে দর্শককে বিস্মিত করতে চাই। তিন. আত্মজীবনীমূলক একটি বই লিখতে চাই।’

দর্শকদের কাছে যে সিনেমার মাধ্যমে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন টেলি সামাদ সেটি হলো—‘পায়ে চলার পথ’। অভিনয় ও গানের পাশাপাশি টেলি সামাদ ভালো ছবিও আঁকতেন। সবার প্রিয় এই শিল্পী মুন্সিগঞ্জের নয়াগাঁও এলাকায় বাবা-মায়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.