টিকা ঝুঁকিমুক্ত: কানাডার তিন বিশেষজ্ঞ
করোনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এক আলোচনায় কানাডার তিন বিশেষজ্ঞ করোনার টিকার খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তি বা সূত্রের বক্তব্য প্রচার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, করোনার টিকা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর সাফল্য। টিকার ব্যাপারে বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কহীন এবং অপ্রমাণিত তথ্য প্রচারে মানুষের আস্থা নষ্ট হবে এবং কোভিড নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে। তিন বিশেষজ্ঞই দাবি করেন, এখন পর্যন্ত অনুমোদিত টিকার প্রত্যেকটি বড় ধরনের ঝুঁকি মুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
টরন্টো সময় বুধবার রাতে ‘টিকা নিয়ে কেন সংশয়’ শীর্ষক এই আলোচনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এতে আলোচনায় অংশ নেন- ব্রিটিশ কলম্বিয়া সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এর প্যারাসিটোলোজি এবং জুনুটিক ডিজিস অ্যান্ড ইমার্জিং প্যাথোজেনস এর প্রোগ্রাম হেড এবং ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলম্বিয়ার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোরশেদ, ব্রাম্পটন কেনেডি মেডিকেল ক্লিনিকের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ডা. আবু ইয়াকুব এবং অনুজীব বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ ফজলে রউফ।
বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ মোরশেদ তার আলোচনায় বলেন, স্বল্প সময়ে করোনার টিকা তৈরি হলেও কোনো ঝুঁকি বা কার্যকারিতার প্রশ্নে কোনো ধরনের আপোষ করা হয়নি। প্রত্যেকটি টিকারই বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষণার ফলাফল সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত আছে। প্রতিনিয়তই গবেষক বিজ্ঞানীরা এগুলো পর্যালেঅচনা করছেন। তিনি বলেন, আমি নিজে এই গবেষণার তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে আপত্তি বা দ্বিধা করার মতো কিছু পাইনি।
ড. মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণার কয়েকটি ধাপকে একত্রিত করে টিকার সময়কে কমিয়ে এনেছেন। একটি টিকার জন্য ২শ’ কোম্পানির এক যোগে কাজ করার ঘটনা বিরল হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা টিকা নিয়ে কারো কোনো ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। তিনি যাদের সুযোগ আছে চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষে প্রত্যেককেই টিকা নেয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয়ান চিকিৎসক ডা. আবু ইয়াকুব টিকা এবং করোনার চিকিৎসার ব্যাপারে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানীদের পরামর্শকেই গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবার জন্য টিকা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রোগ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, টিকার গবেষণার যে তথ্য আমাদের কাছে আছে, সেই হিসেবে প্রথম টিকা নেয়ার পর যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, সেটি থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় টিকা নিলে বেশি কার্যকর হয়। প্রথম টিকার পর তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিন মাসের বেশি সময় থাকে। কাজেই তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিলে সেটিও সমানভাবে উপকারী হবে।
অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ ফজলে রউফ তার আলোচনায় কোভিড এবং তার টিকা সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের জন্য বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের বক্তব্যকেই গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত এই ভাইরাস এবং তার প্রতিকার নিয়ে গবেষণা করছেন এবং নতুন নতুন তথ্য জনগণের সামনে নিয়ে আসছেন। তিনি টিকার ব্যাপারে রাজনীতিবিদ বা কোনো দেশের সরকারের প্রধানের বক্তব্যের চেয়েও সংশ্লিষট দেশের প্রধান বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকের কথা মোনার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তারা বিজ্ঞানের তথ্যর ভিত্তিতে কথা বলেন।
নতুনদেশ’র প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, সামাজিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে এমন অনেকেই টিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের বক্তব্য দেন যা সাধারণ মানুষের মনে টিকা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে। একটি বৈশ্বিক মহামারি থেকে দ্রুত পরিত্রাণের জন্যই টিকার ব্যাপারে বিজ্ঞান সম্মত তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।