টিউলিপ ও তারিক পরিবারের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক, তাদের চাচা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক ও মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের ‘অবৈধ সম্পদের’ খোঁজে অনুসন্ধানে নামছে দুদক।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর কমিশন তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আক্তার হোসেন বলেন, তারিক সিদ্দিক, তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক, মেয়ে বুশরা সিদ্দিক, ভাতিজি টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক কর্তৃক পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি জমি আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিংসহ দেশে-বিদেশে নামে বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রাথমিক তথ্যাদি যাচাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
তারিক আহমেদ সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহনার দেবর। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার পতনের দিন পর্যন্ত তার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
আর রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ এমপি, যিনি একদিন আগেও যুক্তরাজ্য সরকারের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশে দুর্নীতিতে নাম আসায় এবং লন্ডনে তার বাড়ি উপহার পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) তিনি সরকারের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্লট দুর্নীতি মামলায় টিউলিপকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের ‘আর্থিক অনিয়মের’ যে অভিযোগ উঠেছে সেখানে শেখ হাসিনার পাশাপাশি টিউলিপ এবং তার চাচার পরিবারের কথাও এসেছে।
দুদকের বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক নথিতে বলা হয়েছে, “রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক (তারিক আহমেদ সিদ্দিকের ভাতিজি) ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করেছেন, যা পাচার করা হয়েছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।
কীভাবে ওই অর্থ ‘পাচার’ করা হয়েছে, সে বিষয়েও একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সারসংক্ষেপে।
সেখানে বলা হয়, তারিক আহমেদ সিদ্দিকর স্ত্রী ও মেয়ে প্রচ্ছায়া লিমিটেড (নিবন্ধন সনদ নম্বর সি-৭৫৬৫৯/০৯, তারিখ ২৫ মার্চ ২০০৯) নামের একটি ‘ভুয়া কোম্পানির’ অংশীদার। ওই কোম্পানি ‘ডেসটিনি গ্রুপ নামের একটি চিট ফান্ড কোম্পানির’ সঙ্গে যুক্ত ছিল। প্রচ্ছায়া লিমিটেড যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করেছে। ওই অর্থ দিয়ে যুক্তরাজ্যে জুমানা ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড প্রোপার্টিস লিমিটেড (নিবন্ধন সনদ নম্বর ৭৪১৭৪১৭, তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১০) নামের একটি কোম্পানিও খোলা হয়েছে।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধেও জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
আক্তার হোসেন বলেন, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তোফাজ্জল হোসেন মিয়া’র বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারসহ ঘুষ বাণিজ্য এবং নানাবিধ দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিক তথ্যাদি যাচাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।