টাকার সংকট নেই: প্রধানমন্ত্রী
ব্যাংকে টাকা নেই—এমন গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, মানুষের প্রয়োজনে রিজার্ভের অর্থ খরচ করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী আবারও সবাইকে উৎপাদনমুখী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শুক্রবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে অনেকে ঘরে রাখছেন। এতে তো চোর সুযোগ পাবে। চোর জানবে টাকা তুলে এনেছে, তারা ওই ঘরে যাবে।’
রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন আগে শুনলাম আমাদের দেশের সবাই রিজার্ভ নিয়ে পারদর্শী হয়ে গেছেন। গ্রামে-গ্রামে, পাড়া-মহল্লায়ও এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিন মেয়াদে আমরা ক্ষমতায় অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, এই ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ কোনো দিন ঋণখেলাপি হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সরকার রিজার্ভ যেখানে রেখে গেছে, তার চেয়ে বাড়িয়েছি। কিন্তু করোনায় পানির মতো টাকা খরচ করেছি, সেটা নানা কাজে খরচ করেছি, মানুষের প্রয়োজনে। এখন খাদ্য কিনতে হচ্ছে। মানুষের যেগুলো ভোগ্য পণ্য, সেগুলো নিয়ে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়। যার জন্য রিজার্ভ কমেছে। শুধু আমাদের নয়, অনেক দেশের রিজার্ভই কমেছে। ’ রিজার্ভ কেন রাখা হয় সে প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্যোগ-দুর্বিপাকে যেন খাদ্য কেনা যায়। আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে তিন মাস নয়, পাঁচ মাস আমদানি করা যাবে, খাদ্য কেনা যাবে। তবে আমি বলব, খাদ্যপণ্য যাতে আমদানি করতে না হয়, সে জন্য সবাইকে উৎপাদনমুখী হতে। ’
মানবাধিকার নিয়ে আমেরিকার অবস্থানের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বঙ্গবন্ধুর দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় এক খুনি রয়ে গেছে। তাকে আমরা দেশে আনার চেষ্টা করছি। যেহেতু তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে, আমেরিকা তাকে লালন-পালন করছে। অবশ্য আমেরিকার কারবারই এ রকম। ’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন কানাডায়, একজন আমেরিকায়, দুজন পাকিস্তানে পালিয়ে আছে। আমাদের চেষ্টা আছে, পৃথিবীর যেখানেই থাকুক তাদের ধরে এনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাজা নিশ্চিত করব। সেটাই আমি চাই। ’
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে যে রকম একজন ড্রাগ ডিলার, বারবার ড্রাগসহ ধরতে গেছে পুলিশ, তার (পুলিশ) ওপর হামলা করেছে, র্যাব ধরতে গেছে হামলা করেছে। ১৪টি মামলার আসামি ড্রাগসহ ধরা পড়ে সে। পুলিশের ওপর তার গ্রুপ গুলি করে, র্যাবের ওপর গুলি করে। তারপর সেও গুলি খায়, মারা যায়। তার জন্য আমাদের দেশের কিছু লোক বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে বেড়ায়। অথচ এই ড্রাগ ডিলারদের খোঁজ আনতে গিয়ে, ধরতে গিয়ে আমাদেরই এয়ার ফোর্সের একজন অফিসারকে ড্রাগ ডিলাররা হরণ করে নিয়ে যায়। অত্যন্ত নির্মমভাবেই তাকে মারে, হত্যা করে। মাত্র কিছুদিন আগের ঘটনা। এ ব্যাপারে কিন্তু তাদের কোনো উদ্বেগ নাই। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কোনো উদ্বেগ নাই, যারা আমাদের ওপরে নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেই আমেরিকারও কোনো উদ্বেগ নাই। কারো কোনো উদ্বেগ নাই। কেমন একটা অদ্ভুত বিশ্ব পরিস্থিতি, সেটাই আমার কাছে অবাক লাগে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সারা বিশ্বকে অর্থনৈতিক মন্দায় ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে আমরা আমাদের অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে পেরেছি। ’ তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। যার কারণে অতিরিক্ত বা অসহনীয় পর্যায়ে দাম উঠে গেছে। এ জন্য আমি কৃচ্ছ সাধনের জন্য অনুরোধ করেছি। সবাইকেই সাশ্রয়ী হওয়া একান্ত দরকার। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যারা একটু অর্থশালী, হাঁচি-কাশি দিলেই দৌড়ায় বিদেশে। করোনায় তো যেতে পারে নাই। তখন বাধ্য হয়েছে আমাদের এখানে চিকিৎসা নিতে। সবচেয়ে বড় কথা ভ্যাকসিন। পৃথিবীর অনেক উন্নত ও ধনী দেশ ভ্যাকসিন বিনা মূল্যে দেয়নি। আমরা দিয়েছি। করোনায় হাসপাতালে গিয়ে আমাদের বড়লোক রোগী, যারা বাধ্য হয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে গেছেন, যাওয়ার পরে অনেকের চক্ষু চড়কগাছ। তাঁরা বলছেন, আমাদের দেশের এত সুন্দর হাসপাতাল আছে! এত ভালো সেবা দেয়? এ জন্য আমাদের ডাক্তার-নার্সদের ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা করোনায় নিরলস সেবা দিয়েছেন। তার পরও যাদের টাকা আছে, তারা তো বিদেশ যাবেই, কিচ্ছু করার নাই। ’
স্বাস্থ্য খাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি চিকিৎসক, নার্সদের সংখ্যা বাড়ানো, চিকিৎসা গবেষণায় পদক্ষেপ, অবকাঠামো নির্মাণের নানা তথ্য তুলে ধরেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্বাচিপের সভাপতি ইকবাল আর্সলান ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।