টয়োটার প্রথম বৈদ্যুতিক পিকআপ ‘হাইলাক্স’

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা অবশেষে তাদের প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক পিকআপ (ইভি) উন্মোচন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বহুল বিক্রীত ও বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ‘হাইলাক্স’ ট্রাকের এই বৈদ্যুতিক সংস্করণটি ডিসেম্বর থেকে বাজারে আসবে। গত সপ্তাহে একটি টিজার ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে টয়োটা এটি উন্মোচনের ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা আপাতত এই মডেল পাচ্ছেন না।

গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটি হাইলাক্সের নবম প্রজন্মের মডেল উন্মোচন করে। টয়োটা জানিয়েছে, এর মাধ্যমে এই আইকনিক পিকআপ বৈদ্যুতিক শক্তির নতুন যুগে প্রবেশ করল। এর নকশায় দৃঢ় ও গতিময় ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সামনে রয়েছে সরু এলইডি হেডলাইট, যা একটি লাইট বারের মাধ্যমে সংযুক্ত। লাইট বারের মাঝখানে টয়োটার লোগো বসানো হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী হাইলাক্স গ্রিলের নকশা ঠিক রেখেও ‘রিয়ার ডেক স্টেপ’ যুক্ত করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক মডেলটি আপাতত শুধু ডাবল-ক্যাব সংস্করণে পাওয়া যাবে।

পিকআপটির ভেতরের সাজসজ্জায় নতুন টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারের স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। এতে দুটি ১২ দশমিক ৩ ইঞ্চির বড় পর্দা রয়েছে- একটি ড্রাইভার ডিসপ্লে, অন্যটি সেন্ট্রাল মাল্টিমিডিয়া স্ক্রিন। অফ রোডের সব কন্ট্রোল সেটিং এখন একটি ‘শিফট-বাই-ওয়্যার’ ড্রাইভ সিলেক্টরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ ছাড়া ওয়্যারলেস ফোন চার্জার ও একাধিক ইউএসবি পোর্টও থাকছে। টয়োটা জানিয়েছে, এটি তাদের প্রথম পিকআপ যাতে ইলেকট্রিক পাওয়ার স্টিয়ারিং (ইপিএস) ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে গাড়িটি চালানো আরও সহজ হবে এবং অসমতল রাস্তায় চালকের হাতে কম ঝাঁকুনি লাগবে।

নতুন হাইলাক্সে ‘টয়োটা টি-মেট’ নামের অ্যাডভান্সড সেফটি ও ড্রাইভিং অ্যাসিস্ট প্যাকেজ যুক্ত করা হয়েছে। টয়োটা সেফটি সেন্স–এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে এতে ‘লো স্পিড অ্যাক্সিলারেশন সাপ্রেশন’, ‘প্রোঅ্যাকটিভ ড্রাইভিং অ্যাসিস্ট’ ও ‘ইমারজেন্সি ড্রাইভিং স্টপ সিস্টেম’-এর মতো নতুন নিরাপত্তা সুবিধা যোগ করা হয়েছে।

টয়োটা জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহারের ফলে হাইলাক্সের অফ-রোড সক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, যা শূন্য কার্বন নিঃসরণেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম। এটি প্রচলিত ইঞ্জিনের হাইলাক্সের মতো প্রায় ৭০০ মিলিমিটার (২৭ দশমিক ৫ ইঞ্চি) গভীর পানিতে চলতে পারে। এতে টয়োটার ‘মাল্টি-টেরেইন সিলেক্ট’ সিস্টেমও থাকছে, যা কাদা, বালু বা পাথুরে মাটির মতো বিভিন্ন পৃষ্ঠে ট্র্যাকশন ও নিয়ন্ত্রণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নত করবে।

বৈদ্যুতিক হাইলাক্সটিতে সামনে ও পেছনে ইলেকট্রিক মোটরের পাশাপাশি ৫৯ দশমিক ২ কিলোওয়াট আওয়ারের একটি ব্যাটারি প্যাক রয়েছে। এটি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ কেজি পর্যন্ত ট্রেইলার টানতে এবং ৭১৫ কেজি পর্যন্ত মালামাল বহন করতে সক্ষম। টয়োটার তথ্যমতে, একবার সম্পূর্ণ চার্জে এটি ডব্লিউএলটিপি ড্রাইভিং রেঞ্জ অনুযায়ী প্রায় ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারবে। টয়োটা জানিয়েছে, এতে উন্নত চার্জিং সুবিধা থাকবে, যা চার্জের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে।

শুধু বৈদ্যুতিক সংস্করণ নয়, টয়োটা নির্দিষ্ট বাজারে ৪৮ ভোল্ট হাইব্রিড এবং ২ দশমিক ৮ লিটার ডিজেল ভ্যারিয়েন্টও চালু রাখবে। মূলত পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় ডিজেল সংস্করণ বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া ২০২৮ সালের মধ্যে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলচালিত হাইলাক্স আনার পরিকল্পনাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

তবে সবার আগে ব্যাটারি-ইলেকট্রিক হাইলাক্সটি বাজারে আসছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ইউরোপের বাজারে এটি প্রথম ছাড়া হবে। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চালুর কথা রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা এই বহুল প্রতীক্ষিত পিকআপটি পাচ্ছেন না। হাইলাক্স বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় না এবং নতুন বাণিজ্য শুল্কের কারণে এর সম্ভাবনা আরও কমে গেছে।

You might also like

Comments are closed.