জেনে নিন শারদীয় দুর্গাপূজার ইতিহাস
হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। কিন্তু আপনি কি জানেন, শরতের এই শারদীয় পূজা উৎসব কিন্তু সব হিন্দুদের নয়। শুধুমাত্র বাঙালি হিন্দুরাই এই সময় মেতে ওঠেন দেবী মায়ের আরাধনায়।
হিন্দুধর্মগ্রন্থ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ থেকে জানা যায়, দুর্গাপূজার প্রবর্তক ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সৃষ্টির প্রথম যুগে পরমাত্মা কৃষ্ণ বৈকুণ্ঠের আদি-বৃন্দাবনের মহারাসমণ্ডলে প্রথম দুর্গাপূজা করেন।
দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে, ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু পৃথিবীর শাসক হয়ে ক্ষীরোদসাগরের তীরে দুর্গার মাটির মূর্তি তৈরি করে পূজা করেছিলেন।
মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর শ্রী শ্রী চন্ডীতে দুর্গাপূজা প্রচলনের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া রাজা সুরথ, মধুকৈটভ, শুম্ভ নিশুম্ভের কাহিনি থেকে দুর্গাপূজার কথা জানা যায়।
তন্ত্র শাস্ত্র মতে, সব স্থান আর সময়ই দুর্গাপূজার জন্য উপযুক্ত। তবে বিশেষ সময় বা তিথি অনুসারে, বছরে মূলত চারটি নবরাত্রি হয়ে থাকে। যার মধ্যে দুটিকে গুপ্ত নবরাত্রি হিসেবে ধরা হয়। গুপ্ত নবরাত্রি আষাঢ় ও মাঘ মাসে হয়, অন্যদিকে প্রত্যক্ষ নবরাত্রি আশ্বিন ও চৈত্র মাসে পালন করা হয়।
এ হিসেবে আশ্বিনের দুর্গাপূজা একটি প্রত্যক্ষ নবরাত্রি বলা যায়। এই নবরাত্রির তিথি অনুযায়ী, ভক্তরা ৯ দিনে দেবী দুর্গার ৯ টি রূপকে আরাধনা করে থাকে। অবাঙালি হিন্দুরাই এই নবরাত্রির পূজা উৎসব বেশি করে থাকে।
বাঙালিদের শারদীয় দুর্গাপূজা কিন্তু নবরাত্রির মতো নয়। এই পূজা উৎসবে ৯দিনে দেবীর ৯ টি রূপ আরাধনার পরিবর্তে ৫ দিন ধরে দেবীর একটি রূপেরই আরাধনা করা হয়ে থাকে।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষ বা দেবী পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে ‘দুর্গাষষ্ঠী’, ‘দুর্গাসপ্তমী’, ‘মহাষ্টমী’, ‘মহানবমী’ ও ‘বিজয়াদশমী’ নামে পরিচিত।
পৃথিবীতে দেবীপক্ষের সূচনা ঘটে অমাবস্যার মধ্য দিয়ে। যা মহালয়া নামে পরিচিত। এই দিন হিন্দুরা তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
বাঙালি সমাজে বর্তমানে যে শারদীয় দুর্গা উৎসব প্রচলিত রয়েছে সেটিকে মূলত ‘অকালবোধন’ বলা হয়। ‘অকালবোধন’ মানে অকালে বা অসময়ে দেব বা দেবীর আরাধনা করাকে বোঝায়।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। যে কারণে এই সময়টি পূজার জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কিন্তু রাম রাবনের যুদ্ধের সময় রাজা রাম যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য নিরুপায় হয়ে এই সময় দেবীর আরাধনা করেছিলেন। অকালের এই পূজা তাই ‘অকালবোধন’ বলে মর্ত্যবাসীদের কাছে পৌঁছায়।
এরপর থেকেই স্মৃতিশাস্ত্রসমূহে শরৎকালে দুর্গাপূজার বিধান দেওয়া হয়েছে। ধরাধামে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জীবনে নানা ঘাত প্রতিঘাত থেকে ভক্তরা নিজেকে জয়ী সৈনিক হিসেবে পৃথিবীর বুকে মেলে ধরতে আর দেবী দুর্গার কৃপা পেতে এই সময়টাতেই তাই মেতে ওঠেন দেবী আরধনায়।
আর ভক্তের ডাকে পৃথিবীতে তখন বিরাজ করে দেবী পক্ষ। অর্থাৎ সেই সময়টুকু আধ্যাশক্তি মহামায়ার শক্তি পৃথিবীতে উপস্থিত হয়। আর ভক্তের ডাক ও আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে সেই শক্তি দিয়েই ভক্তের কৃপা করেন দেবী মহামায়া দুর্গা।