জীববৈচিত্র রক্ষায় সেন্টমার্টিনের বিকল্প নিঝুম দ্বীপ!
পর্যটকদের অস্বাভাবিক ভিড় এড়াতে বিকল্প পর্যটন স্পট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সেন্টমার্টিনের বিকল্প হতে পারে নিঝুম দ্বীপ। আর কক্সবাজারের বদলে পতেঙ্গা বা শাহপরীর দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারে মানুষ। এমন তথ্য জানিয়ে পর্যটন করপোরেশন বলছে; ইকো ট্যুরিজম আর এডভেঞ্চারের মতো পর্যটন কেন্দ্রের কথাও ভাবছে সরকার।
আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ যান্ত্রিক জীবনে যেন একটুখানি স্বস্তি পর্যটকদের। তাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের এমন ভিড় থাকে প্রায় সারা বছর। কিন্তু বাড়তে থাকা পর্যটকের চাপে নষ্ট হচ্ছে সমুদ্র উপকূলের জীববৈচিত্র। ফলে নির্দিষ্ট কিছু পর্যটন স্পটে মানুষের চাপ নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি হয়ে উঠেছে। সে জন্যই পর্যটন বিকেন্দ্রিকরণের এই উদ্যোগ।
যেমন নিঝুম দ্বীপ হতে পারে সেন্টমার্টিনের বিকল্প পর্যটন কেন্দ্র। দ্বীপটির দুই দিকেই আছে সমুদ্র। আছে সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, হরিণসহ নানা রকম বন্যপ্রাণির বিচরণ।
পরিবেশ সংরক্ষণ করেই পর্যটন বা ইকো ট্যুরিজম কিংবা এডভেঞ্চার ট্যুরিজম হতে পারে বিকল্প পর্যটনের আরেক উদাহরণ। যেমন বসন্তে শিমুল কিংবা অন্যান্য ফুলের বাগানে মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা। শীতে অতিথি পাখিকে কেন্দ্র করে হাওড় বাঁওড় বা বনাঞ্চল সমৃদ্ধ নানা স্পটেও হতে পারে বেড়ানোর সুযোগ।
বিশ্লেষকরা বলছেন শুধু স্পট তৈরি করলেই হবে না। নিশ্চিত করতে হবে উন্নত যোগাযোগ ও অন্য অবকাঠামো। পর্যটন বিকাশে সরকার যে মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছে সেখানেও পর্যটনকে বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বন্য প্রাণী গবেষক, বন বিভাগের তথ্য, নিঝুম দ্বীপ নিয়ে করা বিভিন্ন গবেষণাপত্র এবং স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকেই হরিণের সংখ্যা কমতে শুরু করে। ২০০৬ সালে করা এক গবেষণায় এই দ্বীপে হরিণের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪০০ পাওয়া যায়। কিন্তু এই সংখ্যাও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। বন্য প্রাণী গবেষকদের মতে, যেকোনো বনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে চিত্রা হরিণ ৪০ থেকে ৬০টি থাকলেই ওই বনে ভালো সংখ্যায় হরিণ টিকে আছে বলে ধরা হয়।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাডভাইজারি বোর্ডের একটি প্রতিনিধিদল নিঝুম দ্বীপের হরিণের পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখার জন্য সেখানে যায়। কিন্তু তারা দুই দিন নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চলে ঘুরে মাত্র একটি হরিণ দেখতে পায়। পরে তারা হরিণ শিকারের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংঘ আইইউসিএনের ২০১৫ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের রেড লিস্ট খণ্ড ২: স্তন্যপায়ী প্রাণী বইয়ে বলা হয়, ২০০৬ সালে নিঝুম দ্বীপে হরিণের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি ছিল। কিন্তু আবাসস্থল হ্রাস, খাদ্যসংকট এবং শিয়াল ও বন্য কুকুর দ্বারা নবজাতক হরিণ শিকারের কারণে এই সংখ্যা ২০১৫ সালে দুই হাজারের নিচে নেমে আসে।