জাহাজে ৭ খুন: খোয়া যায়নি কিছুই, খোঁজ নেই ইরফানের
কী কারণে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো সাতজনকে?
চাঁদপুরের মেঘনায় সার বোঝাই কার্গো জাহাজে আলোচিত ৭ খুনের ঘটনায় হওয়া মামলায় জাহাজের আটজনের নাম ও ঠিকানা থাকলেও তাদের সঙ্গে থাকা নিখোঁজ ইরফানের কোনো তথ্য নেই। এমন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও জাহাজ থেকে কোনো কিছুই খোয়া যায়নি। তাহলে কেনো এবং কী কারণে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো সাতজনকে? এই নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে জেলার হাইমচর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন এমভি আল বাখেরা নামক কার্গো জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ। মামলায় সংবাদদাতা অপর জাহাজ এমভি মুগনির মাস্টার বাচ্চু মিয়াসহ ৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার বাদী মাহবুব মোর্শেদ তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের কাফকো সার কারখানার জেটি থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশে ইউরিয়া সার নিয়ে মোট ৯ জন রওয়ানা হন। সোমবার বিকেলে জাহাজটি গন্তব্যে পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে জাহাজের মাস্টার মো. সালাহউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন স্টাফকে মুঠোফোনে কল দিয়েও সাড়া পাননি তিনি। এ সময় তার মালিকানাধীন অপর জাহাজ এমভি মুগনি একই পথ পাড়ি দিচ্ছিল। এর মাস্টার বাচ্চু মিয়াকে খোঁজ রাখতে মুঠোফোনে জানান।
এরইমধ্যে দুপুর ১২টায় চাঁদপুরে হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে ঈশানবালা খালের মুখে সার বোঝাই এমভি আল বাখেরাকে অবস্থান করতে দেখেন মাস্টার বাচ্চু মিয়া।
এমভি আল বাখেরা কার্গো জাহাজ। ছবি: সংগৃহীত
একপর্যায়ে ওই জাহাজের কাছে পৌঁছে বাচ্চু মিয়া তাতে উঠে দেখতে পান এমভি আল বাখেরার প্রায় সব স্টাফ মৃত ও অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। বিষয়টি মাহবুব মোর্শেদকে জানানো হলে তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করেন।
একপর্যায়ে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রিজার ও সুকানি রুমে ৩ জনকে মৃত, ব্রিজ রুমে ৩ জনকে রক্তাক্ত এবং ড্রাইভার ও মাস্টার রুমে আরও ২ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের মধ্যে রক্তাক্ত যে ৩ জন ছিল। তারমধ্যে এখন কেবল জুয়েল নামে একজন বেঁচে আছেন। যাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মামলায় আরও বলা হয়েছে, প্রত্যেকের মাথা, গলা ও মুখমণ্ডল রক্তাক্ত জখম ছিল। তবে ৮ জনের এমন করুণ পরিণতি হলেও ইরফান নামে একজন রহস্যজনক কারণে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
মামলা সম্পর্কে হাইমচর থানার ওসি মো. মহিউদ্দিন সুমন জানান, পরিচয়না জানা ব্যক্তিদের আসামি করা এই মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চাঁদপুর সদরের হরিণাঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে।
অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের ঘটনা তদন্ত করতে এরইমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, কোস্ট গার্ড জেলা ও নৌ পুলিশের সমন্বয়ে আলাদাভাবে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর
ঘটনার শিকার কার্গো জাহাজ এমভি আল বাখেরা ঘটনাস্থলে পড়ে আছে। সেখানে নিরাপত্তার জন্য নৌ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহগুলো পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া দাফন সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসন ২০ হাজার এবং নৌ পুলিশ ১০ হাজার টাকার সহায়তা দেয়। নিহতদের মধ্যে দুজনের বাড়ি ফরিদপুর, দুজনের নড়াইল, দুজনের মাগুরা এবং একজনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে।
এদিকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন তাদের সহকর্মীদের হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। এই জন্য তারা আগামী ২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা করে দেয়ারও দাবি জানানো হয়।