জাল টাকার কারবার: সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন
দেশে জাল টাকা প্রতিরোধ ও এ-সংক্রান্ত অপরাধের বিচারের জন্য ‘জাল মুদ্রা প্রতিরোধ আইন, ২০২৩’ নামে নতুন একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, জাল টাকা সংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। একই সঙ্গে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির দ্বিগুণ বা এক কোটি টাকা পর্যন্ত– যেটি বেশি, সে পরিমাণ জরিমানা করা হবে। এ সম্পর্কিত গুজব ছড়ালে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।
নতুন আইনের বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর ৪৮৯(ক)-(ঘ) ধারা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর ২৫(ক) ধারা অনুযায়ী জাল নোটসংক্রান্ত অপরাধের বিচার হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এ এক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। তবে এতে কী ধরনের অপরাধের কী শাস্তি হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। একইভাবে দণ্ডবিধি-১৮৬০ অনুযায়ী, এ-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। এক্ষেত্রেও শাস্তির বিধানগুলো সুনির্দিষ্ট নয়।
তাই জাল নোট সংক্রান্ত মামলার বিচার সুচারুভাবে সম্পাদন সম্ভব হয় নয় বলে জানান কর্মকর্তারা। তা ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের অপরাধের পরিধি বেড়েছে। তাই অপরাধের নতুন নতুন ধরন সংযোজন করে অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তি সুনির্দিষ্ট করে এক্ষেত্রে একটি আলাদা নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে খসড়া প্রকাশ করে অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শিগগির এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনের পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সাত ধরনের অপরাধ করলে অপরাধী সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এর মাধ্যেম অর্জিত সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা এক কোটি টাকা পর্যন্ত, যেটি বেশি সেই অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অর্থ অনাদায়ে অতিরিক্ত পাঁচ বছর কারাদণ্ড ভোগ করবেন।
অপরাধগুলো হচ্ছে– মুদ্রা জালকরণ বা জ্ঞাতসারে মুদ্রা জালকরণ প্রক্রিয়ার যে কোনো অংশ সম্পাদন করা, কোনো মুদ্রা জাল জানা সত্ত্বেও তা মজুত, কেনাবেচা, ব্যবহার, গ্রহণ কিংবা অন্য কোনোভাবে তাকে আসল মুদ্রা বলে ব্যবহার বা লেনদেন করা, মুদ্রা জালকরণ কার্যে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে অথবা জালকরণ কাজে ব্যবহার করা হবে জানা সত্ত্বেও কোনো যন্ত্র, হাতিয়ার, উপাদান বা সামগ্রী প্রস্তুত করা বা প্রস্তুত প্রক্রিয়ার কোনো অংশ সম্পাদন করা, কেনাবেচা, ব্যবহার, সরবরাহ, আমদানি-রপ্তানি, মেরামত, বহন, হেফাজত বা নিজের দখলে রাখা, জাল মুদ্রা তৈরি সংক্রান্ত পদ্ধতি উদ্ভাবন বা তথ্য আদান-প্রদান, জাল মুদ্রা তৈরি সংক্রান্ত ফাইল, অডিও ও ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদির হার্ডকপি কিংবা সফটকপি দখলে রাখা, জাল মুদ্রা বিদেশ থেকে দেশে বা দেশ থেকে বিদেশে সরবরাহ বা পরিবহন বা পাচার করা এবং ব্লিচড বা টেম্পার্ড বা মিসম্যাচড মুদ্রা কেনাবেচা, ব্যবহার বা লেনদেন বা বহন বা দখলে রাখা।
এছাড়া জ্ঞাতসারে জাল মুদ্রা বা আসল মুদ্রা সম্পর্কিত কোনো গুজব ছড়ানোকেও এ আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে এক্ষেত্রে অপরাধী সর্বোচ্চ ১০ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
অপরাধের আমলযোগ্যতা ও জামিনযোগ্যতা প্রসঙ্গে আইনের খসড়ায় বলা হয়, আইনে বর্ণিত আপরাধগুলো আমলযোগ্য, অ-আপসযোগ্য ও অ-জামিনযোগ্য বলে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধ ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী দায়রা জজ আদালত, অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত বা মহানগর দায়রা জজ আদালত, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচার হবে।
আইনের খসড়ায় বলা হয়, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ অথবা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অথবা সংক্ষুব্ধ প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিনিধি অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা নিকটস্থ থানা অথবা আদালতে অভিযোগ বা মামলা করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার বা প্রতিনিধি মুদ্রা জাল কিনা এ বিষয়ে মতামত দিতে পারবেন। কী বৈশিষ্ট্যের কারণে মুদ্রাগুলো জাল বা আসল মুদ্রা বলে চিহ্নিত হয়েছে, সে বিষয়ে উপযুক্ত কারণ মতামতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার বা প্রতিনিধির মতামত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।