জাতিসংঘের কালো তালিকায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী

গাজায় শিশুদের ওপর হামলার কারণে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। গাজায় ইহুদিবাদী সেনাদের হামলায় হাজার হাজার শিশু নিহত হওয়ার জেরে এই সিদ্ধান্ত নিল সংস্থাটি। গতকাল শুক্রবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ আরদান।

জাতিসংঘে ইসরায়েলের এই রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ‘জাতিসংঘ শিশুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অপরাধীদের তালিকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে।’

গিলাদ এরদান আরো জানান, তাকে শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপ জাতিসংঘের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে।’

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্তটি ইসরায়েলকে এই অপরাধের জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে নিবে।’

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলে জাতিসংঘের বার্ষিক ‘চিল্ড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’ প্রতিবেদনে ইসরায়েলের তালিকাভুক্তির বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি যাতে ফাঁস না হয়, সেজন্য এমনটা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আগামী ১৪ জুন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।

জাতিসংঘের এই তালিকায় সৌদি আরব, গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো, সিরিয়া ও সোমালিয়ার নাম রয়েছে।

এ ছাড়া ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-শাবাব, তালেবান, আল-কায়েদার মতো সংগঠনও আছে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জাতিসংঘ নিজেকে ‘ইতিহাসের কালো তালিকায়’ যুক্ত করেছে এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী।’ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর ইসরায়েলি সেনাদের ‘লজ্জার তালিকায়’ যোগ করাকে সঠিক পদক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের ‘কালো তালিকা’ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান অ্যাগনেস ক্যালামার্ড।

তিনি বলেছেন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো শিশুদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আক্রমণ দীর্ঘদিন ধরেই পর্যবেক্ষণ করে আসছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি-জেনারেল বলেছেন, ‘ইসরায়েলের ১৫ হাজার শিশুকে হত্যা করে নিয়ে এই লজ্জাজনক তালিকায় যোগ হওয়া দরকার ছিল না। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের পরিসংখ্যান অনুসারে আমরা জেনেছি অক্টোবরের শুরু থেকে ইসরায়েলি হামলায় ১৫ হাজার ৫০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।’

এদিকে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে করা হতাহতের অনুপাত সংশোধিত করা হয়েছে। সেখানে মোট মৃত্যুর মধ্যে নারী ও শিশু ৬৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫২ শতাংশ বলা হয়েছে। ইসরায়েল বলেছে, এই হ্রাস দেখিয়েছে জাতিসংঘ হামাসের মিথ্যা তথ্যের ওপর নির্ভর করছিল।

তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা এখন হামাস পরিচালিত সরকারি মিডিয়া অফিসের (জিএমও) পরিবর্তে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করছে। এদিকে জিএমও বলছে, ইসরায়েলি হামলায় ১৫ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে আরো বলেছে, গাজার প্রতি ১০ ফিলিস্তিনি শিশুর ৯ জনই ‘ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে’ রয়েছে। ক্ষুধা, পিপাসা এবং মারাত্মক অপুষ্টির কারণে অনেক ফিলিস্তিনি শিশু মারা গেছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা গত সপ্তাহে জানিয়েছে, গাজার প্রতি ৫ শিশুর ৪ জনই প্রতি তিন দিনে অন্তত একদিন ‘পুরো দিন না খেয়ে থাকে।’

গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে বাস্তুচ্যুত লোকে ভরা কেন্দ্রীয় গাজার একটি স্কুলে বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, হামলায় ১৪ শিশু নিহত হয়েছে।

হামলার পর ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) সংস্থাটি বলেছে, ঘটনার পর ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৭০ জন মৃত ব্যক্তিকে আনা হয় এবং ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গত মাসেও একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের কাছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি শিবিরে আগুন ধরে যায়। তখন শিশুসহ ৪৫ জন নিহত হয়। এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তারা আশা করেনি।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় প্রয়োজনীয় সাহায্যে বিলম্ব প্রবেশের অভিযোগও আনা হয়েছে। তারা ফিলিস্তিনিদের বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, ওষুধের পাশাপাশি জ্বালানি থেকে বঞ্চিত করছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং মানবিক সংস্থাগুলোকে সাহায্য বিতরণে ব্যর্থ বলে তাদের অভিযুক্ত করে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা উনরওয়া মুখপাত্র জুলিয়েট তোমা বলেন, ‘অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে গাজার শিশুরা মারা যাচ্ছে।’

সূত্র : বিবিসি

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.