ছাত্র সংসদ নিষ্ক্রিয়, অধিকারবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়

তিন দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদ নিষ্ক্রিয় থাকায় নেতৃত্ব তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ সুযোগে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তৈরি করে ভয়ের সংস্কৃতি। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর তাই জোরালো হয় ছাত্র সংসদকে সক্রিয় করার দাবি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির ও ছাত্র ইউনিয়ন দ্রুত নির্বাচনের কথা বললেও পর্যাপ্ত সময় চাইছে ছাত্রদল।

রাতভর নির্মম নির্যাতনের পর আবরার ফাহাদের নিথর দেহ পড়ে ছিল। ৫ বছর আগে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের হাতে মেধাবী শিক্ষার্থীকে হত্যার পেছনে ছিল একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস। যেখানে ওই শিক্ষার্থী ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মাতৃভূমির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

এভাবে গেল ১৫ বছরে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু ছাত্রলীগের হাতেই খুন হয়েছে কমপক্ষে ৩৯ জন। গেস্টরুমে এনে সাধারণ ছাত্র নির্যাতন, অধিকার হরণ করে গণরুম, জোর করে মিছিলে নেয়া, হল দখল, ক্যান্টিনের নিয়ন্ত্রণ কিংবা টেন্ডারবাজি। পতিত শেখ হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনীর যে ভূমিকাটি ছিল ওই ছাত্র সংগঠনটির তা সবারই জানা।

ক্যাম্পাসের বাইরে এসে শিবির সন্দেহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হাতে বিশ্বজিতের নির্মম হত্যাকাণ্ডে প্রশ্ন উঠেছে লেজুরবৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিয়ে। গণঅভ্যুত্থানের পর এমন সব কর্মকাণ্ড দেখিয়ে যখন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার, তখন নানা আলোচনা আর সমালোচনার দায় নিয়ে আওয়াজ উঠেছে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি এবং ছাত্র সংসদের। কিন্তু এটিকে কীভাবে দেখছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা?

একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেক ধরনের নোংরা রাজনীতি চলছিল, যার কারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো চলে পারছিল না। তাদের ওপর অনেক অত্যাচার করা হয়েছিল।’

অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের চাওয়া-পাওয়াকে, আমাদের কথাগুলোকে, আমাদের যে অভিব্যক্তিগুলো আছে সেগুলোকে প্রশাসনের কাছে পৌঁছিয়ে দিবে। এর জন্য আমাদের ছাত্র সংসদ দরকার। আমাদের ভেতর থেকে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত রকার জন্য ছাত্র সংসদ দরকার।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথায় স্পষ্ট তারা বিগত সময়ের একটা কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর, নতুন করে ছাত্র সংসদ সক্রিয় করার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচনের আভাসও দিয়েছে। জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতা বলছেন, এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পথ তৈরি হবে।

                                        বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতিমা। ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতিমা বলেন, কলেজ থেকেই ছাত্র সংসদ দেওয়ার প্র্যাক্টিসটা করতে হবে যেন সাধারণ ছাত্ররা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উঠে আসতে পারে। যার মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু ধারার ছাত্র রাজনীতি গড়ে উঠবে।

প্রায় একই ধরনের মত দিচ্ছেন ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। ছাত্র ইউনিয়নের মতে, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের ভোটের বিতর্ক থেকে দৃষ্টি সরাতে আড়ম্বরপূর্ণ যে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল, এই নির্বাচনের মাধ্যমে ডাকসুকে সেই কালিমা থেকে মুক্ত করা যাবে।

ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, দ্রুতই নির্বাচন করা উচিত। কিন্তু তার আগে ডাকসুর যে গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংশোধনগুলো সেগুলো করা দরকার।

ইসলামী ছাত্রশিবির মনে করে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তার একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে।

ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা বলেন, এই মুহূর্তে ডাকসু নির্বাচন হতে পারে। এটা হলে যেটা হবে সেটা হলো, গণতন্ত্রের একটা প্র্যাক্টিস আমরা ক্যাম্পাসগুলোতে দেখতে পাবো। এবং এই গণতন্ত্রের প্র্যাক্টিসটাই মূলত ছড়িয়ে যাবে। জাতীয় নির্বাচনের যেমন অনেক বড় আয়োজন লাগে, অনেক প্রস্তুতি লাগে, ক্যাম্পাসে তো আর এতকিছু লাগে না। সেজন্য এটা আমরা মডেল হিসেবে নিতে পারি।

                                                                                                                         ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন। ছবি:সংগৃহীত    

যদিও এখনই ছাত্রসংসদ নির্বাচন চায় না জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেন, একক ব্যক্তিকে বা ছাত্র সংসদগুলোর যারা প্রার্থী হবে তাদেরকে বুঝার জন্য সে সময়টুকু শিক্ষার্থীদের দিতে হবে। তারপর ছাত্র সংসদ নির্বাচন করলে সেটি কার্যকর হবে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক ইতিহাসের সাক্ষী ডাকসু। আওয়ামী লীগের পতনের পর সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চা এবং তাদের অধিকার আদায়ে ডাকসুসহ সব কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এখন জরুরি বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.