ছাত্রদের আরেকটি নতুন রাজনৈতিক দল আসছে, নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকরা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে এপ্রিলে আরেকটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আসছে। যা ভবিষ্যতে রূপ নেবে রাজনৈতিক দলে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রবিবার (১৬ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটির ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়।

অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটিতে (জানাক) ছিলেন শিবিরের সাবেক নেতারাও। এনসিপির শীর্ষ পদ নিয়ে বিরোধে তাদের একাংশ আলাদা হয়ে যায়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের দাবিতে তাদের নেতৃত্বে আরেকটি রাজনৈতিক দল আসছে।

ঘোষণাপত্রে যুক্ত করা গ্রাফিতিতে দু’জন তরুণীসহ ছয়জনের মুখচ্ছবি রয়েছে। নারীদের একজন হিজাব পরা, অন্যজনের মাথা খোলা। তরুণদের একজন দাড়ি-টুপি জোব্বা পরা, একজন আদিবাসী। জামায়াতে ইসলামীর মতো ধর্মভিত্তিক নয়, এর মাধ্যমে মধ্যপন্থি দল গঠনের আভাস দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

তারা জানান, রাজনৈতিক প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে প্ল্যাটফর্মটি। জনগণ চাইলে রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে। শুধু সাবেক শিবির নয়, সব মতের মানুষের জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। শিবির ‘ট্যাগিং’-এ এনসিপিতে যাদের জায়গা হয়নি, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ পূরণের সম্ভাবনা না থাকায় যারা এনসিপিতে যোগ দেননি, তাদের নিয়ে হবে প্ল্যাটফর্ম। সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে।

অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, শরফুদ্দিনসহ অন্তত ৩০ নেতা যোগ দেন জাতীয় নাগরিক কমিটিতে। তারা আলী আহসান জুনায়েদকে এনসিপির সদস্য সচিব পদে চেয়েছিলেন। ছাত্রশক্তি, ছাত্র অধিকার, ছাত্রলীগের পক্ষত্যাগী এবং বাম সংগঠন থেকে আসা নেতারাও নিজ নিজ বলয় থেকে শীর্ষ পদ চেয়েছিলেন।

এ বিরোধে সাবেক শিবির নেতারা এনসিপিতে যোগ দেননি। যোগ না দেওয়া নেতাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ আমলে শিবির হত্যাকে যেভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, নতুন দলেও শুধু অতীতে শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে নেতৃত্বে আসতে দেওয়া হয়নি। ট্যাগিংয়ের রাজনীতি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

প্ল্যাটফর্মের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ, দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ, ধর্মবিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ামুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন, ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এবং আধিপত্যবাদের বিপক্ষে কার্যকর অবস্থান—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়া এখনও অসম্পূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা গণঅভ্যুত্থানের দাবিগুলোর প্রকৃত বাস্তবায়ন চাই। নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.