চোর সন্দেহে নির্যাতন, খাওয়ানো হয় চুন-পানি, যুবকের মৃত্যু

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় গরু চোর সন্দেহে দিনভর মারধর করার পর এক যুবককে চুন ও বালু মেশানো পানি খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার আরেক কিশোর বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উপজেলার কাকুর বাজার এলাকায় বুধবার(২৫ ডিসেম্বর) এই ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকের নাম হেলাল মিয়া (৩৫)। তিনি উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের ঘোষগ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে। গুরুতর আহত কিশোর একই উপজেলার চারগ্রাম চাতল হাওরের বাসিন্দা।

উপজেলার রাধানগর গ্রামে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। গরু চুরির অভিযোগে দুজনকে নির্যাতনের চার মিনিট সাত সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক ও এক কিশোরের হাত পেছনে বাঁধা। তাদের ঘিরে রেখেছে একদল মানুষ। হেলালকে মাটিতে ফেলে তার পিঠের ওপর বসে এক ব্যক্তি তার দুই পা উঁচু করে ধরে রেখেছেন, আরেকজন পায়ের পাতায় বেধরক পেটাচ্ছেন। পরে ওই ব্যক্তি হেলালের ঘাড়ের ওপর বসলে আরেকজন পায়ের পাতা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বাঁশ দিয়ে পেটাতে থাকেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, আহত কিশোর হাঁটতেও পারছিল না। তবুও তাকে বাধ্য করা হয় লাঠি দিয়ে হেলালকে পেটাতে। এ সময় ভিডিওতে একটি লাল গরুও দেখা যায় এবং উপস্থিত জনতা গরু চুরির বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন।

উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হাফিজ উল্লাহ বলেন, বুধবার সকালে দুইজন চোর আটকের ঘটনা শুনেছি। পরে রাতে তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জেনেছিলাম। শুনেছি তাদের খুব মারধর করা হয়েছে, চুন-বালু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। তাদের উদ্ধারে পুলিশ দুইবার গেলেও স্থানীয় বাসিন্দারা হস্তান্তর করেননি।

গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার দিনের কোনো এক সময় স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের গরু চুরির অভিযোগে আটক করেন। ব্যাপক মারধরের পর একজনের মায়ের জিম্মায় দুইজনকে ছেড়ে দেয়। তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় আবার আটকে আধা লিটার পানির বোতলে চুন ও বালু মিশিয়ে একজনকে জোর করে খাওয়ানো হয়।

হেলালের স্বজনের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, বুধবার সকালেই হেলাল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, বমি করতে থাকেন। দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময়ে আহত আরেকজনকে তার স্বজনরা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আরও বলেন, আমাদের বিট পুলিশের কর্মকর্তা খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা জানান যে বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে এবং স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই আর ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়নি। তবে ভিডিও দেখে ইতোমধ্যে আমরা দোষীদের শনাক্ত করে আটক করতে অভিযান শুরু করেছি। আশা করছি, দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.