চাহিদার অর্ধেক কোচ দিয়েই চলছে রেলের যাত্রী সেবা

চাহিদা ৫ হাজার; কিন্তু মাত্র আড়াই হাজার কোচ নিয়েই চলছে বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী সেবা। ফলে ট্রেনগুলোতে উপচেপড়া ভিড়ে যেন ভোগান্তির শেষ নেই। শুধু তাই নয়, কোচ না থাকায় নতুন রুটগুলোতে চালানো যাচ্ছে না ট্রেন। এছাড়া রেল বহরে যুক্ত থাকা কোচের ৬০ শতাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে দেখা দিয়েছে সংকট। দ্রুত কোচ কেনার উদ্যোগ না নিলে লোকসান বাড়ার শঙ্কা তাদের।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকার কমলাপুর থেকে ছাদভর্তি যাত্রী নিয়ে বিমানবন্দর স্টেশন প্রবেশ করে চট্টলা এক্সপ্রেস। সেখানকার প্ল্যাটফরম আগে থেকেই ছিল যাত্রীঠাসা। ট্রেন ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় যুদ্ধ। দরজা-জানালা দিয়ে যে যেভাবে পেরেছেন ভেতরে ঢোকার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেন।

ট্রেনের ভেতর যেন তিল ধারনের ঠাঁই নেই। একজনের কাঁধে অন্য জন ঝুলেও দাঁড়ানোর জায়গা নেই সেখানে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদ উঠেন যাত্রীরা। সেখানেও ভিড়।

রেলপথের নিয়মিত যাত্রীরা বলছেন, লোকাল মেইল আর কমিউটার ট্রেনের এমন দৃশ্য নিত্যদিনের। এসব রুটের ট্রেনগুলোতে কোচের সংখ্যা বৃদ্ধি কিংবা ট্রেন বাড়ানোর দাবি তাদের।

রেলওয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে ৫ হাজার কোচের চাহিদা রয়েছে। তবে ট্রেন চলছে মাত্র আড়াই হাজার কোচ দিয়ে। এজন্য নতুন রুটে চালানো যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত ট্রেন।

বিমানবন্দর রেলস্টেশনের মাস্টার মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘যাত্রীদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। নতুন কোচ থাকলে নতুন রুটে ট্রেন চালানো যেত। এতে যাত্রীদের সুবিধা হত।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘোড়ার আগে গাড়ি কেনার মতো অবস্থা রেলের। কোচ ইঞ্জিন না কিনেই বাড়ানো হয়েছে রেল লাইন। এতে আরও লোকসান বাড়ার শঙ্কা তাদের।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, প্রকল্প শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ট্রেন চলাচলের জন্য করণীয়গুলো করা হয়নি, সেটা একটা অমার্জনীয় অপরাধ হয়ে গেছে বলে আমি বলবো। এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং ঋণ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান হয়ে যেতে পারে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলছেন, এরইমধ্যে নেওয়া হয়েছে কয়েকটি প্রকল্প। এ বছরই ২০০ কোচ কেনার পরিকল্পনা তাদের।

আফজাল হোসেন বলেন, ৩৫টি কোচের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী জুনের মধ্যেই আসবে। ব্রডগেজ প্রায় ২০০ কোচ ভারত থেকে আনার চুক্তি হয়েছে। সেটাও আগামী ৬ মাস পর থেকে আসা শুরু করবে।

এদিকে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পদ্মাসেতু হয়ে খুলনাগামী সুন্দরবন ট্রেন কুষ্টিয়া স্টেশন হয়ে চলাচল করায় এ রুটে স্বস্তির আশা ছিল যাত্রীদের। বাসের পরিবর্তে কম সময়ে সহজেই নিরাপদ ও সাশ্রয়ী এ রেল যোগাযোগ।

তবে ট্রেনের দৈর্ঘ্যরে সঙ্গে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের কম-বেশি যেন ভোগান্তির অন্যতম কারণ। রীতিমতো যুদ্ধ করে যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে হয় প্রতিদিন। সেই সঙ্গে নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয়। প্ল্যাটফর্মে আইনশৃঙ্খলায় রক্ষায় নিয়োজিতদের ঢিলেমির কারণে অন্য ভোগান্তির সঙ্গে বেড়েছে পকেটমারের বিড়ম্বনা।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী একটি ট্রেন কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে পৌঁছালেই শতশত যাত্রী তাতে উঠার জন্য ছুটাছুটি করে। ট্রেনে উঠতে পারেন না অনেকে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.