‘চারদিকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’
চুয়াডাঙ্গা রাইজিং সভায় হাসনাত আবদুল্লাহ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত বলেছেন, ‘চারদিকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে । রবিবারও ঢাকায় ষড়যন্ত্র হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভক্তিতে কাদের লাভ? ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের লাভ। আমরা যখন বিভক্ত হব, তখন তাদের পুনর্বাসনের পথ খুলে যাবে।
সুতরাং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনকে ঠেকাতে, ছাত্রলীগের পুনর্বাসনকে ঠেকাতে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রবীণরা একাত্তর–পরবর্তী সময়ে, নব্বই–পরবর্তী সময়ে যে বাংলাদেশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে, আমরা সেই বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এবং নতুনদের ভয়হীনতার মিথস্ক্রিয়ায় চব্বিশ–পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।
চুয়াডাঙ্গায় সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে জাতীয় নাগরিক কমিটি চুয়াডাঙ্গা রাইজিং সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, আওয়ামী পলিটিক্যালি ফাংশন করবে কি করবে না, এ আলাপ-আলোচনা অনেক পরে। আগে খুনি হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালের বিচার করতে হবে। যারা বাক্স্বাধীনতা হরণ-জুলুম কায়েম করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। আগে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, তারপর ওই আলোচনা আসবে আওয়ামী লীগ কমিটি ফাংশন করবে কি করবে না। বিচারের পূর্বে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে দেখতে চাই না। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসবে কি আসবে না, সেই আলাপ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের জন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলুন।’
একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গি্ত করে আবদুল্লাহ বলেন, ‘তাদের মতামত হচ্ছে—আন্দোলন হয়েছে, সফল হয়েছে, ‘তোমরা ঘরে ফিরে যাও। ক্ষমতা আমরা একাই নেব।’ আমরা বলতে চাই, দয়া করে ক্ষমতামুখী হইয়েন না। ক্ষমতামুখী যারা হয়েছে তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। ক্ষমতামুখী না হয়ে আপনারা জনতামুখী হন, তরুণ প্রজন্ম আপনাদের সঙ্গ দেবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন নাই। ভোট দিতে পারেন নাই বললে ভুল হবে, ভোট যারা দিয়েছেন, ৩০-৪০টা করে দিয়েছেন। আবার যারা দিতে পারেন নাই, একটাও দিতে পারেন নাই। দিনের ভোট রাতে করার রূপকার হিসেবে খুনি শেখ হাসিনার নাম ইতিহাসে সব সময় থাকবে। আমাদের কাছে খবর আছে, গত তিনটি নির্বাচনে খুনি শেখ হাসিনার সঙ্গে কারা আপস করেছেন। খুনি শেখ হাসিনার সঙ্গে কার কার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। সুতরাং আপনারা যারা আওয়ামী লীগের বিচার বাদ দিয়ে পুনর্বাসনের চিন্তা করছেন, তারা তরুণ প্রজন্মের বিরুদ্ধে দালালি করছেন।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগের স্মৃতি হাতড়ে হাসনাত বলেন, ‘আপনারা জানেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পূর্বে তরুণ প্রজন্ম আমরা স্তরে স্তরে প্রতারিত হয়েছি। আমরা দেখেছি বিচারব্যবস্থা কাজ করে নাই। আমরা দেখেছি পুলিশ কাজ করে নাই। প্রশাসন একধরনের মাফিয়া চক্র হয়েছে। প্রশাসনের মধ্যে মাফিয়াতন্ত্র ছিল, যা গণভবন থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো। আমরা তরুণ প্রজন্ম প্রশাসনিক সংস্কার চাই। বিচারব্যবস্থার সংস্কার চাই। আমরা নির্বাচনের সংস্কার চাই। আপনারা দেখেছেন, নির্বাচনের আগের রাতে ওসিকে কীভাবে কিনে ফেলা হয়, ইউএনওকে কীভাবে কিনে ফেলা হয়, ডিআইজিকে কীভাবে কিনে ফেলা হয়। শুধু নির্বাচন কমিশনের সংস্কার দিয়ে কী হবে? পুলিশের সংস্কার প্রয়োজন, পুলিশকে গণমুখী হতে হবে। এই দেশকে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রক্ষা করতে হবে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম ও আশরেফা খাতুন, চুয়াডাঙ্গা জেলার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক, সাধারণ সম্পাদক সাফ্ফাতুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।