চব্বিশে যাদের হারিয়েছি আমরা
শিল্পী, সাহিত্যিক, রাজনীতিক থেকে শুরু করে ২০২৪ সালে অনেক গুণীজনকে হারিয়েছে দেশ। তাদের কেউ আলো ছড়িয়ে গেছেন জীবনভর, কেউবা নিজ কর্ম-গুণে ছিলেন অনন্য। বেদনার সুর ছড়িয়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমালেও তাদের চিহ্ন চিরঅম্লান, চিরভাস্বর।
রবীন্দ্রনাথ সরেন
রবীন্দ্রনাথ সরেন: জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন মারা যান ১২ জানুয়ারি। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বারোকনা গ্রামে নিজের বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। ৬৬ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ সরেন কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ সরেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছাড়াও আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামে সহসভাপতি, কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন।
জাহিদুল হক
কবি জাহিদুল হক: ষাটের দশকের কবি, গল্পকার, গীতিকার জাহিদুল হক মারা যান ১৫ জানুয়ারি। সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দীর কণ্ঠে তার লেখা ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানটি দেশজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
জাহিদুল হক বাংলা কবিতায় যুক্ত করেছিলেন নতুন মাত্রা। উচ্চকণ্ঠের বিপরীতে সংবেদী অথচ সবল উচ্চারণ তাকে বাংলা কবিতাভুবনে বিশিষ্ট স্থান দান করেছিল। কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ, গল্পে তিনি ছিলেন সমান স্বচ্ছন্দ।
সৈয়দ কামাল উদ্দিন আহমেদ
সাংবাদিক সৈয়দ কামাল উদ্দিন আহমেদ: ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ সম্পাদক, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ কামাল উদ্দিন আহমেদ মারা যান ৫ মার্চ। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
সৈয়দ কামাল উদ্দিনের সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৬১ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার মাধ্যমে। বিভিন্ন দৈনিকে তিনি কাজ করেছেন। সর্বশেষ ২০০৫ সালে তিনি হলিডে পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
২০০১ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনে প্রেস মিনিস্টার ছিলেন তিনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কাজ করা এ সাংবাদিক জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
ইহসানুল করিম
ইহসানুল করিম: জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক ইহসানুল করিম মারা যান ১০ মার্চ। ৭৩ বছর বয়সী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব। তার আগে ছিলেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব।
সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবনে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ছাড়াও বিবিসি, পিটিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেছেন ইহসানুল করিম।
সাদি মহম্মদ
সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ: সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদের নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। শহীদ সলিম উল্লাহর ছেলে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। তিনি ছিলেন একাধারে শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার। তার ভাই শিবলী মোহাম্মদ দেশের জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী।
গোলাম আরিফ টিপু
গোলাম আরিফ টিপু: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু মারা যান ১৫ মার্চ। ৯৩ বছর বয়সী এই আইনজীবী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা টিপু রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়।
খালিদ
সংগীতশিল্পী খালিদ: চাইম ব্যান্ডের শিল্পী খালিদ মারা যান ১৮ মার্চ । গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী ১৯৮১ সালে গানের জগতে যাত্রা করেন। ১৯৮৩ সালে যোগ দেন ‘চাইম’ ব্যান্ডে।
তিনি চাইম ব্যান্ডের ভোকালিস্ট হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। ‘সরলতার প্রতিমা’, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে’, ‘হয়নি যাবারও বেলা’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘তুমি নেই তাই’ এমন বহু শোতাপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এ শিল্পী।
কুমুদিনী হাজং
টংক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং: ঐতিহাসিক টংক আন্দোলনের সাক্ষী নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার কুমুদিনী হাজং ২৩ মার্চ মারা যান।
লড়াই-সংগ্রামের জীবন্ত কিংবদন্তি কুমুদিনী হাজং। সংগ্রাম করেছেন ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে। কুমুদিনী হাজংকে ঘিরেই সেদিন ছড়িয়ে পড়েছিল টংক আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ।
জমিদারদের অন্যায্য খাজনা আদায়ের বিরুদ্ধে সেই সময় রাজ সেনার বিরুদ্ধে তিনি কৃষকদের বীরত্বপূর্ণ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৫০ সালে বাতিল হয় টংক প্রথা।
শিব নারায়ণ দাশ
শিব নারায়ণ দাশ: বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার শিব নারায়ণ দাশ মারা যান ১৯ এপ্রিল। ৭৮ বছর বয়সী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তার দেহ দান করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর কর্নিয়া দিয়ে গেছেন সন্ধানীতে।
শিব নারায়ণের তৈরি করা বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত পতাকা ধরেই হয়েছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল।
হায়দার আকবর খান রনো
হায়দার আকবর খান রনো: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টা, প্রবীণ রাজনীতিক হায়দার আকবর খান রনো মারা যান ১১ মে। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হায়দার আকবর খান রনো ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন। ৯০ দশকের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনসহ এরশাদ পতনের গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক ছিলেন তিনি। রাজনীতিকের পরিচয়ের বাইরে তিনি তাত্ত্বিক ও লেখক। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৩।
শফী আহমেদ
শফী আহমেদ: নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফী আহমেদ মারা যান ৩ জুন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
যাদের সাহসী নেতৃত্বে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল, তাদের মধ্যে শফী আহমেদ উজ্জ্বল এক নাম। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম শীর্ষ নেতা।
অসীম সাহা
কবি অসীম সাহা: একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা মারা যান ১৮ জুন। ৭৫ বছর বয়সী এই কবি ডায়াবেটিস ছাড়াও বার্ধক্যের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। পারকিনসন ডিজিজেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
অসীম সাহার লেখালেখি শুরু ১৯৬৪ সালে। ঢাকার পত্রিকায় ছোটদের জন্য লেখা ছাপা হয় ১৯৬৫ সালে। সেই থেকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতা, গান রচনা করে গেছেন কবি অসীম সাহা। সব মিলিয়ে ৩০টি বই প্রকাশিত হয়েছে তার।
শাহ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ
ছারছীনার পীর শাহ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ: পিরোজপুরের ছারছীনার পীর বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমির শাহ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ ১৬ জুলাই মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি।
‘ছারছীনা দারুসুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা’র প্রতিষ্ঠাতা শাহ নেছারউদ্দিন (রহ.) এর দৌহিত্র শাহ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেসিনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সের মুতাওয়াল্লি। সারা দেশে প্রায় দুই হাজার মাদ্রাসাসহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।
শাফিন আহমেদ
শাফিন আহমেদ: দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শাফিন আহমেদ ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায় একটি কনসার্টে গান করার কথা ছিল শাফিনের। কিন্তু তার হার্ট অ্যাটাক হলে শো বাতিল করা হয়। সেদিনই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শাফিনকে, পরে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে; কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনের দুই মহারথী সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এবং সুরকার কমল দাশগুপ্তের ছেলে শাফিন নিজে ছিলেন বেইজ গিটারিস্ট, সুরকার এবং গায়ক।
শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ: তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ৯ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাদেশের বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান শহীদুল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
আমানউল্লাহ খান
ইউএনবি’র চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ খান: দেশের বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ-ইউএনবি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ খান ১২ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি অ্যাডভান্স ডিমেনশিয়া এবং পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন।তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আমানউল্লাহ খান কসমস প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং লিমিটেডেরও কর্ণধার ছিলেন। এখান থেকে বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো ইংরেজি সাপ্তাহিক ঢাকা কুরিয়ার প্রকাশ হয়েছে। আমানউল্লাহ খান কমনওয়েলথ জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশেনের সদস্য ছিলেন।
আজমল হোসেন
সাংবাদিক আজমল হোসেন খাদেম: ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি আজমল হোসেন খাদেম মারা যান ১৭ সেপ্টেম্বর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
আজমল হোসেন খাদেম বাংলার বাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন সত্তরের দশকে। তিনি বাংলাদেশ বেতারে সংবাদ পর্যালোচনা ভিত্তিক কথিকা ‘সংবাদ প্রবাহ’ গ্রন্থনা করতেন, যা বেশ শ্রোতা নন্দিত হয়েছিল।
রুহুল আমিন গাজী
রুহুল আমিন গাজী: ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস, লবণ ঘাটতিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া এই সাংবাদিক দৈনিক সংগ্রামে কর্মরত ছিলেন।
আবদুল গফুর
ভাষা সংগ্রামী অধ্যাপক আবদুল গফুর: তমদ্দুন মজলিশের সদস্য, ভাষা সংগ্রামী ও সাংবাদিক অধ্যাপক আবদুল গফুর ২৭ সেপ্টেম্বর মারা যান।তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
আবদুল গফুর তমদ্দুন মজলিশের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথের বিক্ষোভ-সংগ্রামে তিনিও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ভাষা আন্দোলনের সময়ে ‘সৈনিক’ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী
সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী: সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ৪ অক্টোবর মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খ্যাতিমান এই চিকিৎসককে রাজনীতিতে যুক্ত করতে ১৯৭৮ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রথম মহাসচিব করেন। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বদরুদ্দোজা।
জামালউদ্দিন হোসেন
অভিনেতা জামালউদ্দিন হোসেন: মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি কুড়ানো জামালউদ্দিন হোসেন ১২ অক্টোবর কানাডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন জামালউদ্দিন হোসেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান। তবে তারকা হয়ে ওঠেন টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে।
মতিয়া চৌধুরী
মতিয়া চৌধুরী: বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ১৬ অক্টোবর মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
ইডেন কলেজে পড়ার সময় বাম ধারার ছাত্র রাজনীতিতে জড়ান মতিয়া চৌধুরী। ১৯৬১-৬২ মেয়াদে তিনি ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা ছিল মতিয়া চৌধুরীর। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্নিঝরা বক্তৃতার জন্য তাকে বলা হত ‘অগ্নিকন্যা’। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে মতিয়া চৌধুরীকে। জেলজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি।
শেরপুর-২ আসনের ছয়বারের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালে তাকে সংসদ উপনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়।
মাসুদ আলী খান
অভিনয়শিল্পী মাসুদ আলী খান: বর্ষিয়ান অভিনয়শিল্পী মাসুদ আলী খান চিরবিদায় নেন ৩১ অক্টোবর। ৯৫ বছরের জীবনের শেষ দিনগুলো তার কাটছিল নানা অসুস্থতায়।
মাসুদ আলী খান পঞ্চাশের দশকে ড্রামা সার্কেলের হয়ে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র চালুর পর ‘ভাই ভাই সবাই’ দিয়ে তার ছোট পর্দায় অভিনয় শুরু।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নাটকের পাশাপাশি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন মাসুদ আলী খান। ২০২৩ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।
আশীষ খাঁ
ওস্তাদ আশীষ খাঁ: উপমহাদেশের প্রখ্যাত সরোদবাদক ওস্তাদ আশীষ খাঁ ১৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক হাসপাতালে মারা যান।তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
আশীষ খাঁর জন্ম ভারতের মাইহারে হলেও তার পূর্বপুরুষের ভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের শিবপুর গ্রামে। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নাতি ও ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর ছেলে তিনি।
আবু জাফর
গীতিকার আবু জাফর: গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী আবু জাফর বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগে ৬ ডিসেম্বর মারা যান। তার রচিত সাড়া ফেলা দেশাত্মবোধক গান ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে স্থান পেয়েছিল।
পাপিয়া সারোয়ার
সংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার: দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ১২ ডিসেম্বর মারা যান একুশে পদকজয়ী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। তার বয়স হয়েছি ৭১ বছর।
দর্শক-শ্রোতার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানের শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারের খ্যাতি রবীন্দ্রসংগীতে। আধুনিক গানেও তিনি পরিচিত।
২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার পান। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। চলতি বছর চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে রবীন্দ্রমেলায় পাপিয়া সারোয়ারকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
হেলাল হাফিজ
কবি হেলাল হাফিজ: প্রেম আর দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ ১৩ ডিসেম্বর মারা যান। অকৃতদার এই কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটছিল ঢাকার শাহবাগের সুপার হোম নামের এক হোস্টেলে।
৭৬ বছরের জীবনে খুব কম লিখেছেন হেলাল হাফিজ। তবে তার কবিতা যেমন হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান, তেমনই আবার হয়ে উঠেছিল প্রেমের চিঠির অনুষঙ্গ।
এএফ হাসান আরিফ
উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, প্রবীণ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ ২০ ডিসেম্বর মারা যান। মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে মন্ত্রী মর্যাদায় ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। বাংলাদেশের সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল বিভিন্ন মামলায় মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী হিসেবেও আদালতে দাঁড়িয়েছেন।
৮৩ বছরের জীবনের বেশিরভাগটা তার কেটেছে আইন পেশায়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী ছিলেন ‘এএফ হাসান আরিফ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ চেম্বারের প্রধান।