চারদিন ধরে চিকিৎসা বন্ধ জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে

রাজধানীতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে টানা চারদিন ধরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে আছে। এর ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন দেশে চক্ষু চিকিৎসার প্রধান হাসপাতালটিতে আসা রোগীরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে। শনিবার (৩১ মে) চতুর্থ দিনেও চিকিৎসাসেবা চালুর ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

নিরাপত্তার কারণে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দেওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সঙ্গে সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মারামারি ও সংঘর্ষের পর গত বুধবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে চিকিৎসাসেবা।

আজ শনিবার সকালে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন। কিন্তু ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে যেতে পারছেন না তারা। বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছেন।

ঢাকার পাশের জেলা মানিকগঞ্জ থেকে এসেছেন বৃদ্ধা সফেদা খাতুন। সঙ্গে কিশোর নাতি সবুজকে নিয়ে এসেছেন। জানতে চাইলে সফেদা বলেন, ভোরে রওনা দিয়েছিলাম, যাতে আগেভাবে সিরিয়াল নিয়ে দিনে দিনে চিকিৎসা শেষ করে বাড়ি ফিরতে পারি। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকা গেল না। এখন ফিরে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের ‘গণ্ডগোলের’ কথা তিনি জানতে না।

শুধু সফেদা খাতুন নয়, দূরদূরান্ত থেকে. এমন কি খোদ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রোগীরাও জানেন না, এই হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে অনেকে সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে চিকিৎসা পাবেন না, নিশ্চিত হয়ে হাসপাতালের ফটক ত্যাগ করেন।

রাজধানীর বাড্ডা থেকে চোখের সমস্যা নিয়ে আসেন রমজান আলী। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে পারি না। সরকারি হাসপাতাল বন্ধ। সরকারও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এখন আমরা কী করবো।

অচলাবস্থা কাটানোর চেষ্টা : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অচলাবস্থা কাটাতে গত শুক্রবার হাসপাতালের কয়েকজন সচিব, হাসপাতাল প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বৈঠক হলেও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। হাসপাতালটির চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধা রোহান আহমেদ বলেন, আমি হাসপাতালেই আছি। সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমাদের খাবার ও ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। দুপুরে চিকিৎসা চালুর বিষয়ে বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গত বুধবারও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাসহ এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবু বকর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আহত ৮-১০ জন জুলাই যোদ্ধাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করার বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, পুরো সেবা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, হাসপাতালের ভেতর জুলাই যোদ্ধাদের কিছু অংশ সহিংস আচরণ করেছে। ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে বারবার। এতে আতঙ্কে রয়েছেন চিকিৎসক ও স্টাফরা।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ও কর্মীরা কাজে ফিরতে অনিচ্ছুক। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয় উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।

ডা. জানে আলম বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে দ্রুত চিকিৎসাসেবা চালু করার, তবে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যেন আবার না ঘটে, সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ মে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী বিষপান করলে প্রথম উত্তেজনার সূত্রপাত। বুধবার হাসপাতালে ভর্তি আন্দোলনকারী, কর্মচারী এবং রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।

You might also like

Comments are closed.