ঘাটতি নেই, তবু নাগালের বাইরে লেবু-শসা

সারাদিন সিয়াম সাধনার পর ইফতারে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবতে তৃষ্ণা মেটায় ধর্মপ্রাণ মানুষজন। একইসঙ্গে পরবর্তী অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পানি সমৃদ্ধ সবজি শসার জুড়ি নেই। তাই সারাবছর যেমনই চাহিদা থাকুক না কেন, রমজান মাসজুড়ে লেবু, শসা ও খিরার চাহিদা ভোক্তা পর্যায়ে কয়েকগুণ বাড়ে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা এই তিনটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। প্রতিবারের মতো এবারও একই অবস্থা হয়েছে। রোজার ঠিক আগ মুহূর্তেই লেবু, শসা ও খিরার দাম বেড়েছে ৪০-৬০ টাকা পর্যন্ত। তবে বাজারগুলোতে এসব পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই।

রবিবার (২ মার্চ) সকালে রাজধানীর উত্তরার আজমপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাত ও আকারের লেবু, শসা ও খিরা। এর মধ্যে কলম্বিয়া জাতের লেবু ছোট-মাঝারি-বড়, কাগজি লেবু ছোট, এলাচি লেবু মাঝারি ও বড় এবং দেশীয় বিভিন্ন জাতের ছোট ও মাঝারি লেবু দেখা গেছে। আর শসা ও খিরার ক্ষেত্রে দেশি ও হাইব্রিড দুই ধরনের জাতই দেখা গেছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবুর হালি (৪টি) সর্বনিম্ন দাম শুরু হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায় (ছোট আকৃতির লেবু)। এরপর মাঝারি ধরনের লেবুর হালির দাম চাওয়া হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। আর বড় আকৃতির লম্বা লেবুর হালির দাম ৯০-১১০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া গোল আকৃতির বড় লেবুগুলো হালির দাম ১০০-১৩০ টাকা পর্যন্ত হাঁকা হচ্ছে।

আর দেশি শসার আকৃতি ও মানভেদে ৭০-৮০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০-৮০ টাকা এবং খিরা ৬০-৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।

অথচ গত সপ্তাহেও বড় লেবু সর্বোচ্চ ৪০-৬০ টাকায় ক্রেতারা খুচরা বাজার থেকে কিনতে পেরেছেন। একইসঙ্গে কেজিপ্রতি শসা ও ক্ষিরাও মিলেছে মাত্র ৩০-৬০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, রোজা এবং গরমে লেবুর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। মূলত, ইফতারে শরবত তৈরির জন্যই মানুষজন বেশি করে লেবু কিনেন। সেজন্য চাহিদা বেশি থাকে। তবে লেবুর ভরা মৌসুম না হওয়ার কারণে এবার চাহিদা অনুযায়ী বাজারে লেবু নেই। আবার পাহাড়ি লেবুগুলো এখনও বাজারে আসেনি। যার কারণে দাম চড়া।

সাদ্দাম হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, কারওয়ান বাজারে আজকের লেবুর চাহিদা এতই বেশি ছিল যে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে লেবু নিতে পারিনি। ভোরে অনেকক্ষণ চেষ্টা করে কয়েক জাতের লেবু নিয়েছি। পাইকারি কিনতে যখন দাম বেশি পড়বে, তখন খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আমার দোকানে এলাচি লেবু ছোট ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি শসা ৭০ এবং ক্ষিরা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

আমিনুল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহেই আমরা ২০ থেকে ৩০ এবং সর্বোচ্চ ৪০ টাকা হালি লেবু বিক্রি করেছি। কিন্তু গত শুক্রবার থেকেই বাজারে লেবুর বাড়তি দাম শুরু হয়েছে। একলাফে দাম বেড়েছে ৪০-৬০ টাকা। আর বাকি সব সবজির দাম আগের মতোই আছে। রোজা এবং ঈদ শেষ হওয়ার আগে হয়তো শসা ও ক্ষিরার দাম কমলেও লেবুর দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

এমন অবস্থায় ক্রেতারা বেশ বিপাকেই পড়েছেন। তারা বলছেন, সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আর বাজার মনিটরিংও জোরদার করা হয়নি, যার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

মাহমুদুল হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, এক হালি লেবু কিনতে ৮০ টাকা লাগলো। হঠাৎ করেই এমন কী হয়ে গেল যে ৪০ টাকার লেবু ৮০ টাকা হয়ে গেল। আর শসার দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। কারণ, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনা তৈরি হবে, এটি এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল। লেবু-শসার দাম বাড়াতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সংকট কাজ করছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

আছিয়া খাতুন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, রোজার মাসজুড়ে সবাই ইফতারে শরবতের জন্য লেবু এবং সালাদ হিসেবে শসাকেই প্রাধান্য দেয়। কিন্তু দেখা যায়, প্রতি বছরই ঠিক রোজা আগমুহূর্তে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। অথচ উচিত ছিল রোজা উপলক্ষে দাম কমানো। তাছাড়া মানুষজন এখন দাম বাড়ার কারণে যতটুকু না কিনলেই নয়, ঠিক ততটুকুই কেনাকাটা করছেন। তবে সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা।

দাম বেড়েছে কাঁচামরিচ, টমেটোসহ সবজিরও: রোজা ঘিরে বাড়তি দামের হাওয়া লেগেছে কাঁচামরিচ ও টমেটোসহ অন্যান্য সবজির দামেও। কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচামরিচ জাত ভেদে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যার দাম গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। আর টমেটোর দামও ২৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকায়। এছাড়া শিম ৬০ টাকা, লাউ ৪০-৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.