গ্যারেজে থেকেই অকেজো ৬ কোটি টাকার ৪ অ্যাম্বুলেন্স

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) সুবিধা-সংবলিত চারটি অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট ও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তিন বছর ধরে পড়ে থাকায় প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের বিশেষায়িত যানগুলোর যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এগুলো শুধু নামেই আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স। এগুলো জেলাবাসীর কোনো কাজে আসছে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। তখন আইসিইউ সুবিধা-সংবলিত ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই বছরের শেষ দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি করে এবং ২০২২ সালের মার্চে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও একটিসহ মোট চারটি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। একেকটি অ্যাম্বুলেন্সের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। অ্যাম্বুলেন্সগুলো সেই থেকে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গ্যারেজে পড়ে আছে।

চিকিৎসকরা বলেছেন, বিশেষায়িত এই যানগুলো রোগী বহনের সময় চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স ও একজন সহযোগী থাকা বাধ্যতামূলক। যার বরাদ্দ তাদের নেই। গত তিন-চার বছরে কোনো রোগী পরিবহন করা হয়নি এগুলো দিয়ে। গ্যারেজে পড়ে থেকে যানগুলোর ইঞ্জিন ও ব্যাটারি নষ্ট হচ্ছে।

সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সগুলো চালাতে অন্য অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ে অনেক বেশি জ্বালানি লাগে। এ কারণে এগুলো পরিচালনায় খরচও বেশি। বেশি খরচ দিয়ে কেউ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে চান না। তা ছাড়া যানগুলো চলেও ধীরগতিতে।

জেলা শহরের কান্দিপাড়ার বাসিন্দা ফারুক আহমেদ বলেন, মাস তিনেক আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক আত্মীয়ের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। ওই মুহূর্তে তার জন্য আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন পড়েছিল। যোগাযোগ করলে জানানো হয়, বিশেষায়িত ওই অ্যাম্বুলেন্স ধীরগতিতে চলে এবং এর জন্য চিকিৎসক ও নার্স দরকার, যা তাদের নেই। পরে বিকল্প উপায়ে রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যান তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির সময় বিভিন্ন স্থানে টিকা পরিবহন কাজে বিশেষায়িত ওই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয়। একদিন রোগী নিয়ে চালক ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু রাস্তায় দেখা দেয় বিপত্তি। কারণ, অ্যাম্বুলেন্সটি চলছিল ধীরগতিতে। তা দেখে রোগীর স্বজনেরা খেপে যান। মাঝপথে রোগীকে নামিয়ে অন্য অ্যাম্বুলেন্সে তুলে ঢাকায় যান তারা।

হাসপাতালের গ্যারেজে অ্যাম্বুলেন্সের ছবি তুলতে গেলে চালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গাড়িটি আর চালু করা যাচ্ছে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রঞ্জন বর্মণ বলেন, অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার ছয়-সাত মাস পর এক রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কিছুদিন পর উপজেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রোগী পাঠানো হয়। বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজে পড়ে আছে।

বিশেষায়িত এই অ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স ও সহযোগী থাকা বাধ্যতামূলক উল্লেখ করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিমেল খান বলেন, এটি নামেই আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স। দু-তিনবার রোগী পাঠিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। ইঞ্জিন গরম হয়ে মাঝরাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ হয়ে গেছে। পরে অন্য অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

নানা সমস্যার কারণে তিন বছর ধরে উপহার পাওয়া অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজে পড়ে আছে উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রতন কুমার বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.