গুলশান সমগ্র দেশের চিত্র নয়, একান্ত সাক্ষাৎকারে এআইপি চেয়ারম্যান রাটানা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২১,০০০ লোক মারা যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়- বাংলাদেশে কেবল গত ঈদযাত্রায় প্রাণ হারিয়েছেন ২২১ জন, আহত হয়েছেন আরও ৬৬৪ জন। মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর বার্তা সম্পাদক তারিক চয়নকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এশিয়া ইনজুরি প্রিভেনশন ফাউন্ডেশন (এআইপি) ডেনমার্ক এবং থাইল্যান্ডের চেয়ারম্যান রাটানাওয়াদি উইনথার এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। রাটানার আরেকটি পরিচয় তিনি বাংলাদেশে ডেনমার্কের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল হেমনিটি উইনথার এর স্ত্রী।
# বিশ্বজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনার বর্তমান হাল কি?
—আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার পরও ২০১৮ সালে ১৩ লাখ মানুষ মারা গেছেন!
# আপনি কি জানেন গত ঈদযাত্রায় বাংলাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২২১ জন, আহত হয়েছেন আরও ৬৬৪ জন?
—শুনে খারাপ লাগছে। কিন্তু মোটেও অবাক হইনি। আমি গতবছর বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন স্বচক্ষে দেখেছিলাম।
# আপনারাতো বিশ্বের অনেক দেশে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট সরকারগুলো থেকে কেমন সাহায্য পাচ্ছেন?
—বেশ ভালো। আমরা অনেকটা এনজিও এর মতো। কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয় আমরা সেসব বিষয়ে পরামর্শ দেই। আর সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি।
# বাংলাদেশে ঈদ এবং বিশেষ দিনগুলোতে সড়কে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগের কথা বলা হলেও দুর্ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না…
—শুধু বিশেষ দিন কেন! আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বছরজুড়ে নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে- আইনের প্রয়োগ যতোই কঠোর হোক, তা নিয়মিত না হলে কোন কাজে আসে না।
# সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গাড়িতে তরুণী ধর্ষণের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে…
—অবশ্যই এগুলো শক্তভাবে দমন করতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এসব ঘটনায় শুধু ভুক্তভোগীই নয়, অন্য মেয়েরাও কাজের জন্য বাইরে যেতে সামাজিকভাবে বাঁধার সম্মুখীন হয়।
# এআইপির একটি ভিশন হলো সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। আপনি কি মনে করেন এটা সম্ভব?
—ভিশন তো হলো স্বপ্ন। তা আপনি দেখতেই পারেন। যদিও প্রতিটি মৃত্যুই অগ্রহণযোগ্য।
# এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্ব এবং ভূমিকা নিয়ে কিছু বলবেন?
—অবশ্যই। গণমাধ্যমের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গণমাধ্যমইতো মানুষের কাছে পৌঁছায়। কিন্তু তাদের রিপোর্ট করতে হবে সমাজ পরিবর্তনের জন্য, গৎবাঁধা কিছু নয়। সব রিপোর্টে একটা ‘মেসেজ’ থাকতে হবে। যেমন- আমরা এখন ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ না লিখে ‘সড়কে গাড়ির সংঘর্ষ’ লিখছি। দুর্ঘটনা বললে কেমন যেন সাধারণ মানুষের ভুল বা দোষ মনে হয়।
# আপনার স্বামীতো কূটনীতির পাশাপাশি গিটার বাজানোতেও সিদ্ধহস্ত। ঢাকা ফোক ফেস্টিভালে হাজার হাজার মানুষের সামনে গিটার বাজিয়েছিলেন। তিনি কি তা চালু রেখেছেন?
—(হেসে) হ্যা, পুরোদমে।
# আর আপনার পেইন্টিং? আপনিতো বেশ ভালো ছবি আঁকেন…
—আমি এখন পেইন্টিং এ একদমই হাত দিতে পারছি না। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটছে।
# বাংলাদেশের কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি মিস করেন?
আমি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের সবচেয়ে বেশি মিস করি। বাংলাদেশ খুব ভাগ্যবান যে তার জনসাধারণ খুব সংগ্রামী। যদিও তাদের দৈনন্দিন জীবন খুব কষ্টের, কাজের জন্য প্রতিনিয়ত এখান থেকে সেখানে ছুটতে হয়, তারপরও তারা সাধ্যমতো উপার্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা রসিকও বটে! সরকারের বুঝা উচিত- অনেক ভালো কিছু তাদের প্রাপ্য।
আমরাতো গুলশানে থাকতাম। সেখানকার ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ভালো, অন্যান্য এলাকার তুলনায়তো অনেক বেশি-ই। কিন্তু সেটাতো সমগ্র দেশের চিত্র নয়। আমার চোখে সবসময় এই দৃশ্যটা ভাসে।
# বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?
—অবশ্যই। একটা কথাই বলবো। আপনাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং নিরাপত্তার জন্য আপনাদেরই সরব হতে হবে।