গাজা পুনর্গঠনে মিশরের প্রস্তাবে সমর্থন ইউরোপের শীর্ষ চার দেশের

গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনায় মিসরের প্রস্তাবে একাত্মতা ঘোষণা করেছে ইউরোপের শীর্ষ দেশগুলো। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেন জানিয়েছে, তারা মিসর উত্থাপিত গাজা পরিকল্পনা সমর্থন করে। ইউরোপের শীর্ষ দেশগুলোর এই প্রস্তাবকে সমর্থনের অর্থ তারা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব বিশ্ব মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজাকে ‘দখল করে’ এর ‘মালিকানা নিয়ে’ এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করার ঘোষণার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে। ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের কথাও বলা হয়েছিল।

ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শনিবার (৮মার্চ )বলেছেন, তারা গাজার পুনর্গঠনে আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটি সমর্থন করেন। এই পরিকল্পনায় ব্যয় হবে ৫৩ বিলিয়ন ডলার এবং গাজার ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করেই এটি বাস্তবায়িত হবে।

এক যৌথ বিবৃতিতে চার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই পরিকল্পনাটি গাজার পুনর্গঠনের একটি বাস্তবসম্মত পথ দেখায় এবং এটি যদি কার্যকর করা যায়, তাহলে গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের ভয়াবহ জীবনযাত্রার দ্রুত ও টেকসই উন্নতি হবে।’

মিসরের প্রস্তুত করা পরিকল্পনাটি গত মঙ্গলবার আরব নেতারা গ্রহণ করেন। ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রত্যাখ্যান তা করেছেন। মিসরের প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সেখানে শাসন পরিচালনার জন্য স্বাধীন, পেশাদার ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হবে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এই কমিটি মানবিক সহায়তার তদারকি এবং গাজার প্রশাসনিক বিষয়গুলো সাময়িকভাবে পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। গত শনিবার প্রকাশিত চার ইউরোপীয় দেশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা ‘আরব উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ এবং এই পরিকল্পনাটি প্রস্তুত করার মাধ্যমে আরব রাষ্ট্রগুলো যে ‘গুরুত্বপূর্ণ বার্তা’ দিয়েছে, তা তারা প্রশংসা করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, হামাস ‘গাজা শাসন করতে পারবে না বা ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে থাকতে পারবে না’ এবং এই চার দেশ ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কেন্দ্রীয় ভূমিকা এবং এর সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নকে’ সমর্থন করে।

ট্রাম্প বিশ্ব রাজনীতিতে যে কম্পন তুলেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপ ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। গাজা পরিকল্পনায় ইউরোপের শীর্ষ দেশগুলোর সমর্থন তারই সর্বশেষ উদাহরণ। এর আগে, ইউক্রেন ইস্যুতেও যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে ইউরোপ।

গত সপ্তাহের শুরুর দিকে, হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাদানুবাদের এক দিন পরই ইউরোপের দেশগুলো জেলেনস্কিকে ডেকে নিয়ে তাঁর দেশের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। এর দিন দু-এক পর, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়ন ইউরোপের প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করার জন্য ৮৬৩ বিলিয়ন ডলারের বিশাল পরিকল্পনা উত্থাপন করেন।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন সব ধরনের সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার পর ইউরোপ ট্রাম্পের সমালোচনা করেছে। ইউরোপের নেতারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের ছেড়ে যাচ্ছে। এসব বিষয় থেকে স্পষ্ট যে, ট্রাম্প যে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ নীতি নিয়েছেন তার ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তিনি একাই হয়ে পড়ছেন। দেশটির ঐতিহাসিক মিত্র ইউরোপ দেশটিকে ছেড়ে যাচ্ছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.