গাজার শাসন ফিলিস্তিনিকে দিতে প্রস্তুত হামাস
গাজা উপত্যকার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে স্কাই নিউজ।
এদিকে মিসর জানিয়েছে, তারা গাজাবাসীকে নিজ ভূখণ্ডে রেখেই অঞ্চলটির পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে।
স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের বিদ্যমান সরকারি কর্মচারীদের হয় নতুন প্রশাসনে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, না হয় তারা অবসর নেবেন। তবে অবসর গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের বেতন পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মিসরের রাজধানী কায়রোতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বর্ধিত করার লক্ষ্যে আলোচনা চালাচ্ছে ইসরায়েল ও হামাসসহ অন্যান্য পক্ষগুলো। সফরকারী হামাস প্রতিনিধিদলের ওপর মিসরের তরফ থেকে ব্যাপক চাপ প্রয়োগের পর হামাস এই অবস্থান ব্যক্ত করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কায়রো সফররত হামাসের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের সময় মিসরীয় কর্মকর্তারা এই চাপ প্রয়োগ করেন বলে জানা গেছে।
মিসরের রাজধানী কায়রোতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বর্ধিত করার লক্ষ্যে আলোচনা চালাচ্ছে ইসরায়েল ও হামাস। ছবি: সংগৃহীত
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় জিম্মি-বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে কায়রোতে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে আজ সোমবার। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন জিম্মিদের এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয় দেখভালকারী সমন্বয়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) গাল হিরশ। তাঁর সঙ্গে থাকবেন ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিনিধি দলটি মূলত যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বিনিময় চুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করবে। এই ধাপে ছয় জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। ছবি: সংগৃহীত
অপরদিকে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের নিজ বাসভূমি থেকে না সরিয়েই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনের একটি ‘সামগ্রিক’ পরিকল্পনা করছে তাঁর দেশ। কায়রোতে ওয়ার্ল্ড জিউয়িশ কংগ্রেসের প্রধান রোনাল্ড লডারের সঙ্গে বৈঠকের সময় সিসি এই বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মিসরফিলিস্তিনিদের রেখেই গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে মিসর: মিসরের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সিসি ও লডারের আলোচনার মূল বিষয় ছিল গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন, বন্দী ও জিম্মি বিনিময়ের মাধ্যমে উত্তেজনা কমানো এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
প্রেসিডেন্ট সিসি জোর দিয়ে বলেন, ‘গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা জরুরি এবং এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, গাজার ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি যাতে টিকে থাকে, সে জন্য সব পক্ষকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’ পাশাপাশি, তিনি সতর্ক করেন যে, এই সংঘাত আরও বিস্তৃত হলে তা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য ক্ষতিকর হবে।
সিসি আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের একমাত্র বাস্তবসম্মত পথ হলো ১৯৬৭ সালের ৪ জুনের সীমারেখার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুসালেম।’ এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, এই রাজনৈতিক সমাধানই স্থায়ী ও টেকসই শান্তি নিশ্চিত করতে পারে।