গাজায় ফের ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু, নেতজারিম করিডোর দখল

বর্বর ইসরায়েলি সেনারা পুনরায় গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নেতজারিম করিডোরের একটি অংশ পুনর্দখল করেছে। এছাড়া, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল অবরুদ্ধ উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। খবর আল-জাজিরার।

দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা নেতজারিম করিডোরের কেন্দ্রস্থলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চল ও আংশিক বাফার জোন’ তৈরি করবে।

গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনী করিডোরটি থেকে সরে যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ গাজার বাসিন্দারা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নিজ নিজ বাড়িঘরে ফেরার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে নতুন করে সেনা মোতায়েনের ফলে এই চলাচল আবারও কঠিন হয়ে পড়বে।

আল-জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা সিটি থেকে জানান, নেটজারিম পুনর্দখল করার ফলে গাজার ভেতরে ফিলিস্তিনিদের অবাধ চলাচল ব্যাহত হবে।

হানি মাহমুদ আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক উপস্থিতি কার্যত একটি নতুন স্থল অভিযান। এটি পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, ইসরায়েল এই অঞ্চলকে তাদের সামরিক কার্যক্রম চালানোর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।’

এই স্থল অভিযানের আগে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে, যেখানে মঙ্গলবার একদিনেই ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্থিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস নতুন যুদ্ধবিরতির শর্ত প্রত্যাখ্যান করায় এই হামলা চালানো হয়েছে।

নতুন চুক্তির আওতায় হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জন বন্দির মুক্তি চাওয়া হয়েছিল, যার অধিকাংশই ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী মৃত। তবে ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ না করেই এই বন্দিদের মুক্তি চেয়েছিল।

হামাস বলেছে, তারা জানুয়ারি মাসে স্বাক্ষরিত মূল যুদ্ধবিরতি চুক্তিতেই অটল। এই চুক্তি অনুযায়ী, দুই পক্ষের মধ্যে বন্দি বিনিময়, যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করার কথা ছিল।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধানের গণমাধ্যম উপদেষ্টা তাহের আল-নোনো আল জাজিরাকে বলেন, ‘একটি স্বাক্ষরিত চুক্তি থাকা সত্ত্বেও কেন নতুন প্রস্তাব আনা হচ্ছে? জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবও রয়েছে। আমরা ইতিবাচকভাবে সব প্রচেষ্টার প্রতি সাড়া দিয়েছি। তবে এটি নেতানিয়াহুই বাতিল করেছেন এবং এর দায় তাকেই নিতে হবে।’

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বুধবার (১৯ মার্চ) হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যদি সব বন্দি মুক্ত না করা হয় এবং হামাসকে নির্মূল না করা হয়, তাহলে ইসরায়েল এমন মাত্রার আক্রমণ চালাবে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।’

এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে জাতিসংঘের একটি সংস্থার এক বিদেশি কর্মীও রয়েছেন।

গাজার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এবং ক্রমাগত নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরায়েল তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.