গণমাধ্যম এবং জনপ্রতিনিধিরা মানুষকে টিকা গ্রহণে সচেতন করতে পারেন

সুষ্ঠুভাবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান করতে হলে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। টিকা নিয়ে শুরুতে অনেক মতভেদ থাকলেও টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি কেটে গেছে। তবে মফস্বল এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকে এখনো জানেন না যে টিকা প্রদানের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করা হচ্ছে। তাই গণমাধ্যম এবং জনপ্রতিনিধিরা এক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করায় ভূমিকা রাখতে পারেন। টিকাদান সরকারিভাবেই পরিচালনা করা উচিত। কেউ বিনামূল্যে টিকা পাবে, কেউ পাবে না, তা যেনো না হয়। ভিআইপি এবং তারকারা টিকা গ্রহণের সময় ভক্ত-অনুরাগীরা আশেপাশে ভীড় করে ছবি তুলতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি লংঘন করছেন, তাই এসব নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা কড়াকড়ি করতে হবে।

রাতে (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে গণউদ্দীপনার প্রয়োজন’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব মতামত ব্যক্ত করেন।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের সদস্য এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লুবনা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এমআইএস, ডিজিএইচএস এর ডেপুটি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডা. মারুফুর রহমান দিপু, দৈনিক অন্য দিগন্ত পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ সোহাগ আরেফিন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।

আলোচনার শুরুতে ডা. মারুফ বলেন, প্রথমদিকে টিকা নিতে অনেকের মাঝে অনীহা দেখা গেলেও এখন অনেকেই টিকা নিতে আসছেন। দূর থেকে অনেকে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে দুর্বোধ্য মনে করলেও বাস্তবতা ভিন্ন৷ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল আলাদাভাবে রেজিষ্ট্রেশন কর্ণার স্থাপন করেছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯ লাখেরও বেশি মানুষ রেজিষ্ট্রেশন করেছে। ৬ দিনে ৬ লাখেরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়ে গেছে। প্রথম ধাপে টিয়া দেয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তার আগেই হয়তো তা সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তবে সোহাগ আরেফিন এর সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, মফস্বলে অনেকে এখনো জানেন না যে টিকা এসেছে কিংবা টিকা প্রদানের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করা হচ্ছে। তাই গণমাধ্যমকে আরো ভূমিকা পালন করতে হবে, মাঠ পর্যায়ে মানুষকে আরো বেশি সচেতন করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকাসমূহের জনপ্রতিনিধিরা এক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করায় ভূমিকা রাখতে পারেন। তাছাড়া সাধারণ মানুষকে সহায়তায় বিএনসিসি সহ অন্যান্যদের কাজে লাগানো যেতে পারে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামকে কথা বলার সুযোগ দেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, টিকা নিয়ে শুরুতে অনেক মতভেদ থাকলেও টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি কেটে গেছে। তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখা যাওয়ায় মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছে। এর পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রেখেছে। টিকাদান সরকারিভাবেই পরিচালনা করা উচিত কেননা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে তখন সরকারি কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হবে না। তাছাড়া কেউ টিকা সরকারিভাবে বিনামূল্যে পাবেন, কেউ টাকা দিয়ে কিনবেন তা কেন হবে! পোলিওর টিকার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী করোনার টিকা পেলো, বাকিরা পেলো না তাহলে সবাই অনিরাপদ থেকে যাবে।

গুরুত্বপূর্ণ লোকজন এবং তারকারা টিকা গ্রহণের সময় ভক্ত-অনুরাগীরা আশেপাশে ভীড় করে ছবি তুলতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি লংঘন করা প্রসংগে সোহাগ আরেফিন বলেন, এর জন্য আইনশৃঙ্খলা কড়াকড়ি করতে হবে। এছাড়া ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ এর কথা বলা হলেও তা কেবল সাইনবোর্ড আর স্টিকারেই সীমাবদ্ধ। মানুষ এখন আর এগুলো সেভাবে মানছে না।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর খোরশেদের অনুরোধ টিকাদান কেন্দ্রে সবাই যেনো মাস্ক পরে যান এবং টিকা যেখানে প্রয়োগ করা হয় সেখানে যেনো অন্যদের চেয়ে টিকা গ্রহীতাকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা হয় যেখানে টিকা প্রদানকারী ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। এসব নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে আনসার মোতায়েন করা উচিত।

স্বাস্থখাতে জনবলের ঘাটতির কথা উল্লেখ করে ডা. মারুফ বলেন, এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তিনি বলেন, টিকা গ্রহণের পর ৫/৬ টি সাধারণ উপসর্গ দেখা যাচ্ছেঃ জ্বর, মাথা ব্যথা, গায়ে ব্যথা, টিকা নেয়ার স্থলে মাংসপেশীতে ব্যথা, অনেকের বমি বমি ভাব। ব্যতিক্রম হিসেবে অনেকের ডায়রিয়া বা প্রচন্ড কাপুনি দিয়ে জ্বর হয়ে থাকতে পারে। তবে এগুলো যে কোন টিকার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.