খাবার খেয়ে শুকরিয়া: নবীজির সুসংবাদ
ইসলামে শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি নেয়ামতের পর তাঁর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করা একজন মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। বিশেষ করে খাবার গ্রহণের পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এমন এক আমল, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি, নেয়ামতের বৃদ্ধি ও জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করতে পারে।
কোরআনের আলোকে শুকরিয়ার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলার নির্দেশ: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে যে পবিত্র রিজিক দিয়েছি, তা থেকে খাও এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত কর।’ (সুরা আল-বাকারা: ১৭২)
নেয়ামত বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি: ‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘নিশ্চয়ই যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি তোমাদেরকে আরও দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’” (সুরা ইবরাহিম: ৭)
কৃতজ্ঞতাই প্রজ্ঞা: ‘আর নিশ্চয়ই আমি লুকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি- ‘আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ যে কৃতজ্ঞ হয়, সে নিজেরই কল্যাণের জন্য কৃতজ্ঞ হয়।’ (সুরা লুকমান: ১২)
শুকরিয়া ও জান্নাতের প্রতিদান: ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমাদেরকে আহার করাই… আল্লাহ তাদেরকে সেই দিনের অমঙ্গল থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদের মুখ উজ্জ্বলতা ও আনন্দ দান করবেন এবং তাদেরকে জান্নাত ও রেশমে পরিধান করাবেন।’ (সুরা আল-ইনসান: ৯-১২)
হাদিসের আলোকে শুকরিয়ার ফজিলত
ধৈর্যশীল রোজাদারের সমান পুরস্কার: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘খাবার খেয়ে যে আল্লাহর শোকর আদায় করে, সে ধৈর্যশীল রোজাদার ব্যক্তির সমান পুরস্কার লাভ করবে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৬৫)
গুনাহ মোচনের সুসংবাদ: ‘যে ব্যক্তি খাওয়ার পরে এই দোয়া পাঠ করবে- الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا الطَّعَامَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ তার পূর্ব ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (আবু দাউদ: ৪০২৩)
আল্লাহর সন্তুষ্টি: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন সেই বান্দার উপর, যে যখন কিছু খায় তখন আল্লাহর প্রশংসায় আলহামদুলিল্লাহ পড়ে, আর যখন কিছু পান করে তখনও আলহামদুলিল্লাহ পড়ে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭৩৪)
জান্নাতের সুসংবাদ: ‘যারা আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ করে শুকরিয়া আদায় করে, তারা জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা পাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৭৫৪৮)
শুকরিয়া আদায়কারীর প্রতিদান
- নেয়ামত বৃদ্ধি: শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ তাআলা তাঁর নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেন
- গুনাহ মোচন: খাবারের পর শুকরিয়া আদায়কারীর গুনাহ ক্ষমা করা হয়
- আল্লাহর সন্তুষ্টি: আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হন, যা জান্নাতের অন্যতম চাবিকাঠি
- আখেরাতের পুরস্কার: শুকরিয়া আদায়কারীদের জন্য জান্নাতে বিশেষ মর্যাদার প্রতিশ্রুতি
খাবার গ্রহণের পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় শুধু একটি শিষ্টাচার নয়, এটি ঈমানের প্রকাশ, আল্লাহর নেয়ামতের স্বীকৃতি এবং জান্নাতের পথে একটি সহজ আমল। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি নেয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Comments are closed.