করোনার প্রভাব মোকাবিলায় দেশের কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় সরকার যে সব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করেছে সেগুলো থেকে সিএমএসএমই কোনো সুবিধা পায়নি। তাই করোনা প্রভাব মোকাবিলায় তাদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকার এই প্যাকেজের মধ্যে ছয় হাজার কোটি টাকা উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং চার হাজার কোটি টাকা ট্রেডিং খাতে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে।
এই প্যাকেজের অর্থ ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) বা এনজিওদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, ১০ হাজার কোটি টাকার এই তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংক গঠন করবে এবং এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ‘ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি’ তৈরি করবে। শুধু চলতি মূলধন খাতে এ প্রণোদনা ঋণ দেওয়া হবে।
প্রান্তিক গ্রাহক পর্যায়ে কুটির শিল্পের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা, ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে ৩০ লাখ টাকা ও ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সর্বোচ্চ বার্ষিক সুদের হার, মুনাফা বা সার্ভিস চার্জ হবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণগ্রহীতা দেবে ৪ শতাংশ এবং অবশিষ্ট সাড়ে ৫ শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে।
সরকারের দেওয়া সুদ ভর্তুকির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক পাবে দশমিক ৫ শতাংশ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পাবে ১ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পাবে ৪ শতাংশ সুদ। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের মেয়াদ হবে ২ বছর। ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮টি মাসিক কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পাওয়ার জন্য গ্রাহকদেরকে আবেদনপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের কপি, ট্রেড লাইসেন্স বা সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র এবং যেকোনো দুই জনের গ্যারান্টি দাখিল করতে হবে।
ক্ষুদ্র ঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক পর্যায়ে তাদের দেওয়া মোট ঋণের ৬০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং ৪০ শতাংশ ট্রেডিং খাতে বিতরণ করতে পারবে। বিতরণ করা ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে গ্রাহক পর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং করার কথা বলা হয়েছে। তবে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহক নির্বাচন, ঋণ বিতরণ সংশ্লিষ্ট ব্যয়, গ্রেস পিরিয়ড, ঋণের কিস্তি, ঋণ আদায়, ঋণ শ্রেণিকরণ ও মনিটরিং ইত্যাদি বিষয় ‘এমআরএ’ ও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
প্রণোদনা ঋণ তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবিত নীতিমালায় বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হচ্ছে, ঋণ তহবিলের জন্য আবেদনকারী ক্ষুদ্র ঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘এমআরএ’ থেকে ঋণ পাওয়ার সক্ষমতা বিষয়ক প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে; অর্থায়নকারী ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যয়নপত্র চাওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে এমআরএ এ-সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র সরবরাহ করবে; প্রত্যয়নপত্র পাওয়ার সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে; অর্থায়নের ক্ষেত্রে এমএফআই’র পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক শুধু ঋণ পরিশোধের ঘোষণাপত্র ও বিদ্যমান ঋণ স্থিতি জামানত হিসেবে রাখা যাবে; অর্থ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করবে এবং এ নীতিমালার আওতায় গৃহীত ঋণ দিয়ে বিদ্যমান কোনো ঋণ সমন্বয় বা পরিশোধ করা যাবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বা এমআরএ বরাবর চাহিদা অনুযায়ী সময়ে সময়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
সূত্র জানায়, নীতিমালাটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ কুটির, ক্ষুদ্র ও ছোটো উদ্যোক্তারা ক্ষতি কাটিয়ে যাতে দ্রুত ঘুড়ে দাঁড়াতে পারে সে জন্য এই প্রনোদণা ঋণ প্যাকেজটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।