ক্যালিগ্রাফির নেশায় ছেড়েছেন নিজের দেশ, হাতে লিখলেন বিশ্বের বৃহৎ কোরআন

ক্যালিগ্রাফির নেশায় নিজের দেশ ইরাক ছেড়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বসবাস শুরু করেছিলেন আলি জামান। সেখানেই ছয় বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর নিজের হাতে লিখেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআনের কপি। কোরআনের এই কপির প্রতিটি পাতা ৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১.৫ মিটার প্রস্থ, যা ইসলামী ক্যালিগ্রাফিতে এক নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে।

 

ক্যালিগ্রাফি শিল্পে মনোনিবেশ করতে ২০১৭ সালে পরিবারসহ ইস্তাম্বুলের ফাতিহ এলাকায় আসেন তিনি। তখন তিনি ৩০ পৃষ্ঠার একটি কোরআন প্রকল্প শেষ করেছিলেন, যার প্রতিটি পাতা ২.১০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১.৫০ মিটার প্রস্থের ছিল।

এরপর তিনি আরও বড় এক চ্যালেঞ্জ নেন। এক বছর ধরে বিশ্বের বৃহৎ কোরআন লেখার ধারণা নিয়ে গবেষণা, মাপ নির্ধারণ ও উপকরণ সংগ্রহের পর ২০২০ সালে তিনি তার শিক্ষক বিজার এরবিলিকে ডিজাইন দেখান এবং অনুমোদন পান।

তার লেখা বিশ্বের বৃহৎ নতুন কোরআনটি থুলুৎ লিপি ব্যবহার করে হাতে লেখা হয়েছে এবং কোনো আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়নি। পাতা খোলার পর আয়তন ৩ মিটার বিস্তৃত হয়।

ছয় বছর ধরে জামান প্রতিদিন সকালে নামাজের পর কাজ শুরু করতেন। খাবার ও নামাজ ছাড়া প্রায় কোনো বিরতি নিতেন না। প্রতিটি অক্ষর নিখুঁতভাবে লিখতেন এবং প্রতিটি আয়াত লাইন বাই লাইন হস্তলিখন করতেন।

তবে ২০১৯ সালের শেষের দিকে তার স্বাস্থ্য খারাপ হতে শুরু করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে অসুস্থতার কারণে কাজ সাময়িক থামিয়ে দেন। তার শরীরের ওজন ৮৩ কেজি থেকে কমে ৫৮ কেজি পর্যন্ত আসে। তারপরও কোনো বাহ্যিক সাহায্য ছাড়াই তিনি প্রকল্প শেষ করেন।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জামান সিরিয়া, মালয়েশিয়া, ইরাক ও তুরস্কে থুলুৎ ও নাসখ লিপিতে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০২০ সালে তিনি বিভিন্ন প্রখ্যাত গুরুদের কাছ থেকে ইজাজাহ গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে তুরস্কের আন্তর্জাতিক হিল্যায়-ই-শেরিফ প্রতিযোগিতায় রাষ্ট্রপতি এরদোগানের হাত থেকে প্রেস্টিজ পুরস্কার পান।

জামান বলেন, খুব কম মানুষই এমন কিছু করতে পারে, আর তা করতে পারা আনন্দ ও গৌরবের।

তার ছেলে রেকার জামান জানান, তুরস্কে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকে বিশেষ মূল্যায়নের কারণে পরিবারটি ২০১৭ সালে তুরস্কে আসে। বাবার মনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন লেখার ধারণা জন্ম নেয়, কিন্তু ইরাকে সেই সুযোগ ও স্বীকৃতি ছিল না। তুরস্কে এসে তিনি সেই স্বপ্ন পূরণ করেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৯ সালে প্রকল্পটি শুরু হয়। পরিবারের হিসাব অনুযায়ী, আগের বৃহৎ কোরআন পাণ্ডুলিপির দৈর্ঘ্য ২.২৮ মিটার এবং প্রস্থ ১.৫৫ মিটার। জামানের কোরআন দৈর্ঘ্যে ৪ মিটার, প্রস্থে ১.৫ মিটার এবং খোলা অবস্থায় ৩ মিটার।

যারা পাণ্ডুলিপি তৈরির ঘরে যান, তারা বিস্ময়ে কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে যান। রেকার জানান, একজন মাদ্রাসার শিক্ষক বিস্ময়ে বললেন ‘মাশাল্লাহ’ এবং ছাত্ররাও অভিভূত হয়ে বাবাকে অভিনন্দন জানান।

কোরআনটি আগুন বা ছেঁড়া থেকে রক্ষা করা এবং প্রদর্শন ও শিক্ষার জন্য ব্যবহারের সুযোগ রাখার পরিকল্পনা করছে পরিবারটি । কোরআনের কপিটি সংরক্ষণের জন্য তুরস্কে স্থায়ীভাবে রাখা হবে নাকি অন্য কোথাও নেওয়া হবে এখনো নির্ধারিত হয়নি।

জামান আরও বলেন,  কোরআন মূল্যবান, উসমানীয় যুগে ক্যালিগ্রাফিকে উচ্চ মূল্য দেওয়া হতো। তুরস্কে ক্যালিগ্রাফির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আমরা আশা করি এটি এখানে থাকবে এবং দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ করবে।

সূত্র : আনাদোলু, টিআরটি, ডেইলি সাবাহ

You might also like

Comments are closed.