কী হচ্ছে সুদানে?
একসময়ের দুই বন্ধুর ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের বলি হচ্ছে সুদানের লাখ-লাখ নিরীহ মানুষ। প্রশ্ন উঠছে দুই বছর ধরে এমন সশস্ত্র সংঘাত চালিয়ে নেয়ার রসদ কোথায় পাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী? বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে- বিদেশিদের মদদেই এত দীর্ঘায়িত হচ্ছে সুদানের গৃহযুদ্ধ। একদিকে আরএসএফ’কে অস্ত্র দেয়ার অভিযোগ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে মিসর, তুরস্ক ও ইরানের বিরুদ্ধে রয়েছে সেনাবাহিনীকে সহায়তার অভিযোগ।
দৃশ্যপট এখন অনেকটা এমন— সুদানের আল ফাশির যেন রীতিমতো লাশের শহর। আধা সামরিক বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণের পর নতুন করে আলোচনায় আফ্রিকার দেশটির ভয়াবহতম গৃহযুদ্ধ।
গত দুই বছর ধরেই সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে রণক্ষেত্র রাজধানী খার্তুম, দারফুরসহ কয়েকটি অঞ্চল। যার বলি হয়ে প্রাণ গেছে প্রায় দেড় লাখ নিরীহ মানুষের। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ বাসিন্দা।
মূলত, ২০১৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই অস্থিতিশীল সুদান। একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব গৃহযুদ্ধে রূপ নেয় ২০২৩ সালে।
সেনাবাহিনী ও আরএসএফ টানা দুই বছর ধরে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘাতের রসদ পাচ্ছে কই? বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ, বিদেশি সহায়তা ছাড়া এতদিন ধরে এই গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে রীতিমতো অসম্ভব।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দাবি, সুদানের আধাসামরিক বাহিনীর অস্ত্রের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা সংযুক্ত আরব আমিরাত। অভিযোগ- আরএসএফের অধীনে থাকা বিপুল স্বর্ণের খনির জন্যই তাদের এই বিতর্কিত অবস্থান। যদিও বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে আবুধাবি।
অন্যদিকে মিসর, তুরস্ক ও ইরানের বিরুদ্ধে নিজ নিজ স্বার্থে সুদানের সেনাবাহিনী অর্থাৎ এসএএফকে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ওয়ারের তথ্যমতে, সুদানের সীমান্তবর্তী মিসর লাখ লাখ শরণার্থীকে আবারও নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায়। এ কারণেই সুদানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের সেনা সদস্যদের সমরাস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেয় কায়রো।
প্রসঙ্গত, লোহিত সাগরে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্য ইরান ও তুরস্কের। আর তাই সুদানের সামরিক বাহিনীকে সামরিক সহায়তার অভিযোগ দেশ দু’টির বিরুদ্ধে। যদিও তারা দেশটির গৃহযুদ্ধে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

Comments are closed.