কিরিলোভ হত্যা: দায় স্বীকার ইউক্রেনের, জবাবের হুঁশিয়ারি মস্কোর

রাশিয়ার পারমাণবিক সুরক্ষা বাহিনীর দায়িত্বে থাকা জেনারেল ইগর কিরিলোভকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন; প্রতিক্রিয়ায় কিয়েভকে কড়া জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে মস্কো।

এ অবস্থায় উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিজ্ঞানী ও কেমিস্টদের নিরাপত্তা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগ। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কুরস্কের সাফল্যের পর রুশ ভূখণ্ডে গুপ্ত হামলা চালিয়ে রাশিয়াসহ পুরো পৃথিবীকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে কিয়েভ।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে রাশিয়ার মস্কোয়, এক সহকারীকে নিয়ে নিজের আবাসিক ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন রুশ পারমাণবিক, জৈবিক এবং রাসায়নিক সুরক্ষা বাহিনীর প্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল ইগর কিরিলোভ।

গাড়িতে উঠবেন ঠিক তার আগ মুহূর্তে আচমকা এক বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলেই সহকারীসহ নিহত রুশ প্রতিরক্ষা বিভাগের এই হাই-প্রোফাইল জেনারেল।

হামলার পর প্রকাশিত ড্যাসক্যাম ভিডিও পর্যবেক্ষণ ও প্রাথমিক তদন্তের পর মস্কোর গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, গাড়ির পাশে পার্ক করা একটি বৈদ্যুতিক স্কুটারে আগে থেকেই রাখা ছিল ৩শ’ গ্রাম ওজনের বিস্ফোরক।

মূল ঘটনাস্থলের দূর থেকে ঘটানো এই পূর্বপরিকল্পিত গুপ্তহত্যার দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা বিভাগ, সিকিউরিটি সার্ভিস অব ইউক্রেন বা এসবিইউ।

এমনকি এই গুপ্ত হামলার আগের দিন টেলিগ্রাম পোস্টে কিয়েভের সিকিউরিটি সার্ভিস দাবি করে, নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় সেনাদের হত্যার পেছনে জেনারেল কিরিলোভ পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

রুশ জেনারেল ও তার সহকর্মী নিহত হওয়ার পর এ ঘটনার তদন্ত শুরুর ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। ভিন্ন এক প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কিরিলোভ নির্ভীক যোদ্ধার মতো মাতৃভূমির জন্য লড়েছেন।

আর কিয়েভকে হুঁশিয়ারি সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট ও সিকিউরিটি কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের চরম প্রতিশোধ নেবে মস্কো।

দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলায় আমরা আমাদের সহকর্মী ও কমরেড ইগর ইগর কিরিলোভকে হারিয়েছি। হত্যার সাথে যারা জড়িতদের যারা রাশিয়ায় আছেন তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। কিয়েভের যে সব কর্মকর্তারা হত্যায় মদদ দিয়েছেন তাদেরকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে।’

রুশ গণমাধ্যম আরটির তথ্য বলছে, ক্রেমলিনের ধারণাই ছিল না ইউক্রেন এমন পরিকল্পিত গুপ্ত হামলা চালাতে পারে।

ইউক্রেনীয় সংবাদ সংস্থার দাবি, মস্কো কিয়েভের ওপর আগ্রাসন শুরুর পর এই প্রথম হাই-প্রোফাইল কোনো সেনা কর্মকর্তাকে সরানোর পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত করলো জেলেনেস্কির গোয়েন্দা বিভাগ।

আর নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কুরস্কের সাফল্যের পর রুশ ভূখণ্ডে গুপ্ত হামলা চালিয়ে রাশিয়াসহ পুরো পৃথিবীকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে কিয়েভ।

যুদ্ধের পরিণতি নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন যে আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছেন- এই হামলার পর তার টনক নড়বে।

বিবিসি মনিটরিংয়ের বিশ্লেষক ভিটালিয়া শেভস্যাঙ্কো বলেন, ‘রাশিয়াসহ পুরো বিশ্বকে একটি বার্তা দিয়েছে ইউক্রেন। সেটি হচ্ছে, যদি ইউক্রেন চায়, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো নেতাকেই হত্যা করা সম্ভব। রুশ সেনাঘাঁটি, ডিপ্লোমেট জোন, বিশেষভাবে সুরক্ষিত অঞ্চল- এমনকি ক্রেমলিন থেকে মাত্র ৪ দূরবর্তী কোনো এলাকায় প্রবেশ করেও গুপ্তহত্যা চালানোর সক্ষমতা আছে কিয়েভের।’

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, মারিয়া জাকারোভা আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রচার না হলেও, ক্রেমলিন সূত্রের বরাতে বিবিসি জানায়, মুখ্য সচিবদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর জাকারোভা মন্তব্য করেন, বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার প্রতিপক্ষ ছড়িয়ে আছে। বিশ্লেষকদের দাবি, রুশ ভূখণ্ডে কোনো হামলা হলে মস্কো বরাবরই এই একই বিবৃতি দিয়ে থাকে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.