‘কিটো ডায়েটের ফলে হতে পারে যে ৭ মারণব্যাধি’

স্বাস্থ্য সচেতনতা

মানুষের মাঝে ইদানীং বেশ ভালোভাবেই স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর না দিয়ে অনেকেই চাইছেন দ্রুত ওজন কমাতে। দ্রুত ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে তারা বেছে নিচ্ছেন বিপজ্জনক খাদ্যাভ্যাস, যেখানে বিধি-নিষেধের কড়াকড়ি অনেক। তেমনই একটি পদ্ধতি হচ্ছে কিটো-ডায়েট। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এই ডায়েট মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।

কিটো গ্রিক শব্দ ‘কিটোল’ থেকে এসেছে। কিটো এসিভোসিস হলো দেহে কিটোন পদার্থ জমাট বাঁধার ফলে অম্লব্যাধি তৈরি হওয়া। এপিলেপসি বা মৃগীরোগীদের চিকিৎসায় কিটোজেনিক ডায়েট ব্যবহার করা হয়। এতে থাকে কম শর্করা ও উচ্চমাত্রার প্রোটিন, উচ্চমাত্রার চর্বি। মৃগীরোগীদের শরীরে কিটোজেনেসিস হয়, যেন ফ্যাটি এসিড জারণে বিঘ্ন ঘটে। কিটোজেনিক ডায়েটের ফলে মৃগীরোগীদেরও ওজন কমে যেতে দেখা যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ডায়েটই ওজন কমানোর জন্য সঠিক পথ বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

ওয়াশিংটন ডিসির ‘ফিজিশিয়ানস কমিটি ফর রেসপনসিবল মেডিসিন’-এর ‘নিউট্রিশন এডুকেশন ম্যানেজার’ ও পুষ্টিবিদ লি ক্রসবি সম্প্রতি এই ‘কিটো ডায়েট’ নিয়ে বিশ্লেষণমূলক গবেষণা করেছেন। ‘ফ্রন্টিয়ারস অব নিউট্রিশন’ শীর্ষক সাময়িকীতে তার সেই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি ওই খাদ্যাভ্যাসকে বিপজ্জজনক আখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন, ‘কিটো ডায়েট’-এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাতটি প্রাণঘাতী রোগ। এর মধ্যে কয়েকটি আবার ওই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে নিরাময় করে বলে ধারণা করে সাধারণ মানুষ।

বেস্টলাইফ ডটকমে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুসারে, কিটোজেনিক ডায়েটে ‘কার্বোহাইড্রেইট’ বন্ধ করে দেওয়া হয় পুরোপুরি। আর বাড়ানো হয় স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়ার মাত্রা, সঙ্গে থাকে মাঝারি পরিমাণের প্রোটিন। যারা এই খাদ্যাভ্যাসের আদর্শ অনুসারী, তারা খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট করে রাখেন, যাতে শরীরে ‘কিটোসিস’ অবস্থা তৈরি হয়। এই খাদ্যাভ্যাসের প্রবর্তনকারীদের মতে, ‘কিটোসিস’ মানে হলো শরীরে ‘কিটোন বডি’ তৈরি হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। মস্তিষ্কের ‘নিউরন’ ও অন্য যেসব কোষ সরাসরি ফ্যাটি এসিড ব্যবহার করতে পারে না, তাদের জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে এই ‘কিটোন বডি’।

ক্রসবি ও তার দলের দাবি, কিটো ডায়েটের কিছু পদ্ধতি দাবি করে সেগুলো ক্যান্সার, ‘আলঝেইমারস ডিজিজ’, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তবে তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এই খাদ্যাভ্যাসের একমাত্র উপকারিতা, যার পেছেনে পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে, তা হলো এটি ‘এপিলেপ্সি’র চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য। বরং ‘কিটো ডায়েট’ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও ‘আলঝেইমার’স ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়।

অনেকের শরীরেই এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণের কারণে রক্তে কোলেস্টেরল বাড়তে দেখা গেছে। যাদের বৃক্কের দুর্বলতা আছে তাদের বৃক্ক একেবারে অকেজো হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে শরীরে ‘কার্বোহাইড্রেইটের অভাবের কারণে নবজাতকের ‘নিউরাল লোব’ অপরিণত থেকে যেতে পারে।

তাই সব মিলিয়ে ‘কিটো ডায়েট’ আসলে রোগবালাইয়ের ঝুঁকিবর্ধক স্বাস্থ্যের জন্য ধ্বংসাত্মক একটি খাদ্যাভ্যাস। ওজন নিয়ন্ত্রণের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি হলো দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের হিসাব রাখা। খাদ্যাভ্যাসে বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকতে হবে। ফল, সবজি, লতা, পরিপূর্ণ শস্য, মাংস সব কিছুই শরীরের জন্য জরুরি। তাই পরিমাণমতো সবই খেতে হবে।

সূত্র : বেস্টলাইফ ডটকম।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.