কারাদণ্ডের বদলে বই পড়তে, সিনেমা দেখতে ও গাছ লাগাতে হবে
পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সৃষ্ট সহিংসতার একটি মামলায় দোষী প্রমাণিত হলেও কারাগারে যেতে হচ্ছে না এক আসামিকে। কারাবাসের বদলে তাঁকে বই পড়তে, সিনেমা দেখতে ও গাছ লাগাতে হবে। সংশোধনের সুবিধার্থে শর্ত সাপেক্ষে এক প্রবেশন কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে থাকার রায় দিয়েছেন আদালত।
মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান গত সোমবার (২ মার্চ) এ রায় দেন। সাজা পাওয়া ওই আসামির নাম ইব্রাহিম হোসেন। তিনি জেলার মহম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ আমীর আলী বলেন, ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একটি পারিবারিক বিরোধের জের ধরে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের মোসাম্মাত সায়লা আক্তার নামের এক নারী আহত হন। এ ঘটনায় সায়লার ছেলে মোহাম্মদ রকি মহম্মদপুর থানায় একই গ্রামের ইব্রাহিম, কামাল ও চায়না বেগমকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় চায়না বেগম নির্দোষ প্রমাণিত হন। মামলার তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় অপর আসামি কামাল হোসেনকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেয় পুলিশ।
অন্যদিকে হামলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ছয় মাসের কারাদণ্ডের পরিবর্তে সংশোধনের জন্য ইব্রাহিমকে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে এক বছর সময়কালের জন্য ৭টি শর্তে প্রবেশন মঞ্জুর করেন বিচারক মো. জিয়াউর রহমান। এই প্রবেশনকালীন সময়ে বিচারক ইব্রাহিমকে যে ৭টি শর্ত পূরণ করতে বলেছেন সেগুলো হলো—প্রবেশনকালীন সময় দোষী সাব্যস্ত আসামি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না; শান্তি বজায় রাখবেন এবং ভালো ব্যবহার করবেন; আদালত ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন; কোনো ধরনের মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না; কোনো খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে আর মিশবেন না; প্রবেশনকালীন সময়ে আসামি মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর ২টি বই (জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলো ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা একাত্তরের চিঠি), ইসলাম ও নৈতিকতার ওপর আরও ২টি বই পড়বেন এবং আগুনের পরশমণি সিনেমাটি দেখবেন; এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হিসেবে ২টি বনজ ও ৩টি ফলদ মোট ৫টি গাছ লাগাতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ইব্রাহিম শর্ত ভঙ্গ করলে বা তাঁর আচরণ সন্তোষজনক না হলে তার প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে এবং অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডাদেশ ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করবেন।
মামলার পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, পারিবারিক বিরোধের একপর্যায়ে ইব্রাহিম এমন অপরাধ করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। ক্ষণিকের উত্তেজনায় করা এই অপরাধে ইব্রাহিমকে শাস্তি ভোগের জন্য কারাগারে পাঠালে সংশোধন হওয়ার পরিবর্তে অভ্যাসগত অপরাধীদের সঙ্গে মিশে পুরো অপরাধী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাঁকে এই অপরাধে শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠালে হয়তো কৃত অপরাধের জন্য প্রতিশোধ নেওয়া হবে, কিন্তু একজন সম্ভাবনাময় তরুণের স্বপ্ন ও জীবন ধ্বংস হবে। দণ্ডের উদ্দেশ্য প্রতিশোধ নয়; বরং সংশোধন হওয়ার পথ করে দিয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে একজন সুনাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া।