কাজ শুরুর একযুগ পর বিআরটিসির ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস দিয়ে চালু হলো বাস র্যাপিড ট্রানজিট- বিআরটি প্রকল্পের সেবা। বিজয় দিবস সামনে রেখে রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে বিআরটিসির ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস দিয়ে বিআরটির বিশেষ লেনে এই সেবার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
পূর্বনির্ধারিত সময়ের আগেই সকাল ৮টায় গাজীপুরের শিববাড়ী বিআরটি প্রকল্পের বাস ডিপো থেকে সরকারের পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ১০টি বাস চলাচলের উদ্বোধন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পরিবহন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক। আরও বক্তব্য দেন, বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কাজ শুরুর পরে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে না। এটি একটি রুগ্ন প্রকল্প, সেটা আমরা আগে থেকেই জানি। অনেকবার সময় বাড়ানো হয়েছে, তারপরও কাজ শেষ করতে পারেনি। এই প্রকল্প মানুষের কোনো উপকারে আসছিল না। তাই প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটি লেনে ১০টি বিআরটিসি বাস দিয়ে বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এ সার্ভিস চলার সময়ে যেসব সমস্যা দেখা যাবে, সেগুলো ধারাবাহিকভাবে সমাধান করা হবে।’
গাজীপুরের শিববাড়ীতে প্রকল্পের বাস ডিপো থেকে বিআরটিসির এসি বাস দিয়ে বিআরটি সেবার উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি : সংগৃহীত
হতএর আগে বিআরটি প্রকল্প নিয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক কাযালয়ে গণশুনানিতে যেসব সমস্যা চিহ্নিত করা হয়, সেসব কবে নাগাদ সমাধান করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি গণশুনানির বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানি না।’ এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক গণশুনানির বিষয়ে উপদেষ্টাকে জানালে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়গুলো দেখব। গনশুনানিতে যেসব সমস্যা উঠে এসেছিল, সেগুলো দেখে যেসব বিষয় বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’
আগামী জুনে এ প্রকল্পের সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্যস্ততম মহাসড়কের দুইপাশে বিভিন্ন পোশাক কারখানার লাখ লাখ শ্রমিক কিভাবে মহাসড়ক পারাপার হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করায় আমরা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বিমানবন্দর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা অংশে ১০টি নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করব। এছাড়াও অন্যান্য কাজগুলো সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বিআরটি লেনে বিশেষ বাস আমদানীর জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সেগুলো এলে আরও বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবে।’
এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে বিআরটি লেনের বাসগুলো এবং জয়দেবপুর থেকে ঢাকা রুটের ট্রেনগুলোকে চট্রগ্রামের মতো ইলেকট্রিক লাইনে চলাচলের ব্যবস্থা করব।’
উপদেষ্টা জানান, বর্তমানে বাসগুলো শিববাড়ী থেকে বিআরটি লেন দিয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাবে। তারপর বাসগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ফার্মগেট নেমে সেখান থেকে অন্যান্য বাসের মতো গুলিস্তান পর্যন্ত যাতায়াত করবে।
ফাওজুল কবির আরও বলেন, বিআরটি লেন দিয়ে বিআরটিসি বাসের পাশাপাশি এখন বিভিন্ন ব্যক্তিগত যান, কার ও মাইক্রোবাসও চলতে পারবে। এর মাধ্যমে গাজীপুরের মানুষ গাজীপুরের নিজ বাসায় থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করতে পারবে।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ১০ এসি বাস দিচ্ছি। প্রয়োজনে বা চাহিদা বাড়লে আরও বাড়ানো হবে। বিআরটিসির এসি বাসগুলো শিববাড়ী টার্মিনাল থেকে বিআরটি লেনে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০.৫ কিলোমিটার এবং বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার পথে চলাচল করবে। শিববাড়ী থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ১৪০ টাকা। তারমধ্যে শিববাড়ী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া ৭০ টাকা। বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়াও ৭০ টাকা। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে চার জোড়া কমিউটার ট্রেনও চালু হচ্ছে।’
কর্মকর্তারা বলেন, বিআরটি লেন দিয়ে শুধু বাসই চলাচল করার কথা। কিন্তু শুরুতে বিআরটিসির ১০টি বাস দিয়ে পুরো বিআরটি লেন আটকে রাখা ঠিক হবে না। এজন্য কার ও মাইক্রোবাসও বিআরটি লেন দিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হবে। এর ফলে সাধারণ লেনগুলোতে চাপ কমে যাবে।