বাংলাদেশে কাঁকড়া ব্যবসার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ইলন মাস্ক ও মার্ক জুকারবার্গকে রেস্তোরাঁ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য নিয়েছেন ট্রেড লাইসেন্স।
চাইলেই এমন ভুয়া ই-ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া যাচ্ছে সিটি করপোরেশন থেকে। যাচাই বাছাই না থাকার সুযোগে ভুয়া ঠিকানা ও কাগজপত্র দিয়েও ট্রেড লাইসেন্স বের করছেন অনেকে।
সম্প্রতি ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজ করেছে ডিএনসিসি। আর এ সুযোগে ভুয়া তথ্য দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। যেমন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের নাম দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ই-ট্রেড লাইসেন্স বের করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর আফতাবনগরে। আবার বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র দেওয়া হয়েছে তেজগাঁওয়ের মনিপুরী পাড়ার। আবেদনে দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বরটিও ভুয়া। পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে একজন চীনা নাগরিকের।
এখানেই শেষ নয়, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ ও স্টারলিংকের মালিক ইলন মাস্কের নামে রেস্টুরেন্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করা হয়েছে। ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করলেও তাতে অনুমোদন দিয়েছে ডিএনসিসি।
সম্প্রতি স্বয়ংক্রিয় ই-ট্রেড লাইসেন্স সেবা চালু করে ডিএনসিসি। যেখানে একজন নাগরিক নিজেই আবেদন করে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বের করতে পারছেন।
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে লাইসেন্স করার সুযোগ দেওয়ার পর থেকে ভুয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। ট্রাম্পের নামে ইস্যু হওয়া ই-ট্রেড লাইসেন্সটি সেই ঘটনারই একটি উদাহরণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে তিনি দাবি করেন, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও যে ই-ট্রেড লাইসেন্স হতে পারে, তা ডিএনসিসির কর্মীরা করে দেখিয়েছেন।
মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের স্টাফরাই (কর্মীরা) ট্রায়াল (পরীক্ষা) করার জন্য ওটা (ট্রাম্পের নামে ই-ট্রেড লাইসেন্স) করেছেন। তাঁরা ট্রায়াল করে দেখিয়েছেন, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও ট্রেড লাইসেন্স হয়ে যাচ্ছে। ইলন মাস্কের নামেও হয়ে যাচ্ছে। এটা করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যে ভুয়া ই-ট্রেড লাইসেন্স বের করা যায়, সেটা বোঝানোর জন্য।
এই সুযোগই নিয়েছেন মো. নুরুজ্জামান। একটি আবাসিক ভবনে আইসক্রিম তৈরির লাইসেন্স নিয়েছেন তিনি। নুরুজ্জামানের ট্রেড লাইসেন্সের সূত্র ধরে রাজধানীর ভাটারায় বন্ধ পাওয়া গেল সেই প্রতিষ্ঠান। ফোনে যোগাযোগ করলে নুরুজামানের দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের সামছু নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করিয়েছেন। ৪ হাজার ২৬৬ টাকা ফি হলেও দিয়েছেন ১০ হাজার টাকা।
মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমি তো এত কিছু বুঝি না, ভাইয়া। এটা জন্য যা যা দেওয়ার সব দিয়ে দিয়েছি। আমি এটা (আইসক্রিম) নিজে বানাই, নিজেই ভ্যানে করে বিক্রি করি।’
এত অনিয়মের পরও ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের দাবি, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজ করতেই এই প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘বার, রেস্টুরেন্ট ও ফায়ারের লাইসেন্স, যেগুলো জন্য ইনভেসটিগেশন এবং ন্যাশনাল পলিসি, সিকিউরিটি, পাবলিক সিকিউরিটি জড়িত সেগুলো আমরা সরাসরি দিচ্ছি না। সেটা থ্রু প্রসেসের মধ্য দিয়ে যাবে। কিন্তু ট্রেড এবং অন্য ক্ষেত্রে আমরা এই স্বাধীনতাটা দেবো।’
আর নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, সহজ করার নামে অবৈধ ট্রেড লাইসেন্স বের করার সুযোগ দিয়েছে ডিএনসিসি।
নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘অনলাইন বা সেবা সহজীকরণের নাম দিয়ে এভাবে করাটা আধুনিক নগর পরিকল্পনার যে ধারণা তার সাথে বেমানান। আমরা চাই সেবা সহজ হোক। কিন্তু এটা না যে যতটুকু যেভাবে খুশি, কোনো ধরনের যাচাই বাছাই ছাড়া এভাবে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
নিয়ম অনুযায়ী একটি ট্রেড লাইন্সের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন।
রেভিনিউ সুপারভাইজার ও কর-কর্মকর্তা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ট্রেড লাইসেন্সের অনুমোদন দেন। অথচ নতুন নিয়মে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হচ্ছে। এতে কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও থাকছে। যে কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি লাইসেন্স ইস্যু হচ্ছে এখন।