কম্বাইন্ড হারভেস্টারে ভর্তুকি বিনা নোটিসে বন্ধ, চালের দাম বাড়ার শঙ্কা
বিনা নোটিসে বন্ধ হলো ভর্তুকি মূল্যে ধান কাটার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিক্রির প্রকল্প। এলসির দায় শোধ করা নিয়ে বিপাকে আমদানিকারকরা। মেশিনে ধান না কাটতে পারলে খরচ বাড়ায় প্রভাব পড়বে চালের দামেও। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বোরো ধান নিশ্চিতে ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় হাওর অঞ্চলের কৃষকরা।
সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের ওপর নির্ভরশীল অনেক কৃষক। শ্রমিক সংকট ও আকস্মিক বন্যার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে ভর্তুকি মূল্যে এই মেশিন কৃষককে দিতে ২০২০ সালে ৩০২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় সরকার। প্রকল্পের আওতায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার কিনলে ৫০-৭৫ শতাংশ দাম শোধ করা ভর্তুকি দিয়ে।
প্রকল্পে মেশিন সরবরাহকারীরা বলছেন, এরই মধ্যে ৯ হাজার ৫৭৮টি মেশিন বিক্রিও করেছেন তারা। ৫ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গেল আমন মৌসুম থেকে আকস্মিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ভর্তুকি। যার মাশুল গুনছেন তারা।
আবেদিন ইকুয়েপমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, চলতি বছর এ খাতে ভর্তুকি দেয়া হবে কি না, এমন কেনো তথ্য নেই। ফলে দুশ্চিন্তায় মেশিন সরবরাহকারী থেকে শুরু করে কৃষকরা।
মেটাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিল বলেন, ভর্তুকি না থাকায় উদ্যোক্তা ও কৃষকরা মেশিন কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে আমদানি করা মেশিন বিক্রিতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
এই প্রকল্প বন্ধ করে দেয়ায় শুধু কি আমদানিকারকরাই বিপাকে পড়েছেন? নাকি চালের উৎপাদন খরচও বাড়বে? সেই হিসাবও মিলিয়ে দিচ্ছেন তারা। প্রকল্পে মেশিন সরবরাহকারীরা জানান, একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে এক ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে বস্তাবন্দি করতে যেখানে খরচ হয় ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। সেখানে হাতে কেটে এই কাজ করতে ১৫ জন শ্রমিকের লাগবে একদিন, আর ব্যয় হবে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা। ছবি: সংগৃহীত
আবার হাতে ধান কেটে জমি থেকে ঘরে তুলতে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ ফলন নষ্ট হলেও কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে হয় সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ। এসব বাড়তি খরচ দিন শেষে যোগ হবে চালের দামে। আবেদিন ইকুয়েপমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, এতে বাড়বে চালের দাম। কারণ উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। যা প্রভাব ফেলবে বিক্রিতে। ফলে অনেক লোকসানের ভয়ে কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে পারে।
এমন বাস্তবতায় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বচ্ছতার নামে কৃষিবান্ধব এমন প্রকল্প বন্ধ করা হলে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, এ খাতে দুর্নীতি হয়েছে, এটি পরিষ্কার। তবে ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়া হলে এটি কৃষির জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। যা প্রভাব ফেলবে দেশের খাদ্য ব্যবস্থায়। তবে ঠিক কি কারণে প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করা হয়েছে তা না জানালেও এটি আর চালু করা হচ্ছে না তা নিশ্চিত করেছেন বর্তমান প্রকল্প পরিচালক।