এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের আদ্যোপান্ত

ভাবুন, একজন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক, প্রতি মিনিটই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অনেক দেশেই উন্নত চিকিৎসার যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় এসব রোগীকে যে কোনো সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা দূরবর্তী দুর্ঘটনা যেমন পাহাড়, দ্বীপ বা দুর্গম এলাকা, যেখানে সাধারণ অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে পারবে না, সেখানে এক ভিন্ন ধরনের উদ্ধার ব্যবস্থা আকাশপথে চলাচল করে। এটিই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জগৎ।

একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মূলত উড়ন্ত হাসপাতাল। এটি বিশেষভাবে সজ্জিত হেলিকপ্টার বা বিমান, যা জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগী পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ধারণা নতুন নয়। প্রথম এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি চালু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, যখন বিশেষভাবে সজ্জিত বিমান ব্যবহার করে যোদ্ধাদের আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হত। এরপর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ধাপে ধাপে আধুনিক ফ্লাইং আইসিইউতে পরিণত হয়েছে— যেখানে রয়েছে ভেন্টিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, ডিফিব্রিলেটর এবং জরুরি ওষুধ। প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও প্যারামেডিক্স রোগী পরিবহনকালে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে পারেন। কিছু এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিশেষভাবে নবজাতক শিশুর চিকিৎসা, অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা ট্রমা ব্যবস্থাপনার জন্যও সজ্জিত থাকে। সংক্ষেপে, এটি আকাশে ভাসমান একটি হাসপাতাল।

বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি পরিচিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা রয়েছে। যেমন- ‘এয়ারমেড ইন্টারন্যাশনাল (ইউএসএ)’, ‘গামা এভিয়েশন (ইউকে)’ ‘লাইফফ্লাইট (অস্ট্রেলিয়া)’, ‘ফালাক এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (ডেনমার্ক)’, এবং ‘ভায়োলেন্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (ভারত)। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা অত্যন্ত উন্নত এবং খরচও অত্যধিক, প্রতি ঘণ্টা ২৫ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। খরচ মূলত নির্ভর করে দূরত্ব, বিমান ও চিকিৎসক দলের ওপর।

আজকের আধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সঙ্গে ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। হালকা, দ্রুত এবং দীর্ঘ দূরত্বে ওড়ার সক্ষমতা সম্পন্ন বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু বিমান নাইট ফ্লাইটের জন্য উন্নত নেভিগেশন সিস্টেমে সজ্জিত, যাতে রাতের অন্ধকারেও জরুরি চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হয়। এছাড়া, টেলিমেডিসিন সংযোগের মাধ্যমে স্থলবর্তী ডাক্তাররা রোগীকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং হাসপাতাল পৌঁছানোর আগেই চিকিৎসার সমন্বয় করতে পারেন।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো চাপের মধ্যে দলগত কাজ। চিকিৎসা দলকে রোগীকে স্থিতিশীল রাখা, হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ নিশ্চিত করা, অনিশ্চিত আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেয়া এবং সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ—সবই করতে হয় শতাধিক বা হাজার ফিট উঁচুতে উড়ার সময়। আর এটিই হলো চাপের মুখে সর্বোচ্চ স্তরের চিকিৎসা।

সাধারণ মানুষের কাছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সকে হয়তো বিলাসিতা মনে হতে পারে, কিন্তু এর বাস্তব প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। প্রতি বছর এই এভিয়েশন এবং মেডিসিনের সংমিশ্রণের মাধ্যমে অসংখ্য জীবন রক্ষা করা হয়।

You might also like

Comments are closed.