এবার ট্রাম্পকে পরাজিত করার ডাকে নারীদের বিক্ষোভ

আল জাজিরার রিপোর্ট

রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ অন্য বড় শহরগুলোতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার নারী। সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিচারপতি মনোনীত করার প্রতিবাদে এবং আগামী ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনে তাকে পরাজিত করার আহ্বানে এই বিক্ষোভ পালন করা হয়। আয়োজকরা বলছেন, শনিবারের এই র‌্যালিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যই অংশ নিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শপথ নেয়ার পর ট্রাম্প বিরোধী প্রথম ‘ওমেন্স মার্চ’ হয়েছিল ওয়াশিংটনে। আয়োজকরা বলছেন, সেই বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা শনিবারের বিক্ষোভ করেছেন। ওয়াশিংটনে ফ্রিডম প্লাজায় সমবেত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন ওমেন্স মার্চের নির্বাহী পরিচালক র‌্যাচেল ও’লিয়ারি। তিনি এ সময় আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিতে নারীদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, যখনই আমরা একত্রিত হই, যখনই আমরা রাস্তায় নামি, যখনই আমরা ভোট দিই, তখনই যুক্তরাষ্ট্রে একক সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠেন নারীরা। এমন কিছু নেই, এমন একটি বিষয়ও নেই, যা দিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প আমাদেরকে থামিয়ে দিতে পারেন।

খবরে আরো বলা হয়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা নারী প্রগতির আইকন সুপ্রিম কোর্টের প্রয়াত বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিন্সবার্গের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য, গত ১৮ই সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা রক্ষণশীল বিচারক এমি কোনি ব্যারেটকে তার স্থানে বেছে নেয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ব্যারেটকে বাছাই করা নিয়ে ডেমোক্রেটদের আপত্তির প্রেক্ষিতে আগামী ২২ শে অক্টোবর সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মুহূর্তে ব্যারেটকে মনোনীত করায় তারা ক্ষুব্ধ। কারণ, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন মেরিক গারল্যান্ডকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের ৬ মাস আগে এভাবে বেছে নিয়েছিলেন, তখন তাতে বাধা দিয়েছিলেন রিপাবলিকানরা।
নারীবাদী গ্রুপ আলট্রাভায়োলেটের পরিচালক সোঞ্জা স্পু বলেছেন, প্রকৃত সত্য হলো আমরা হলাম শক্তিশালী। আর তারা হলো ভীতু। তারা এখন একটি রশির ওপর দিয়ে হাঁটছে। তারাও এটা জানে। আমরা তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার মতো অবস্থায় রয়েছি। শিকাগোর কাছে ইলিনয়ের হিলস এলাকার ৪৯ বছর বয়সী প্রুডেন্স সুলিভান, ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলের ৪৭ বছর বয়সী তার বোন কেলি প্যাজেট উড়ে গিয়ে যোগ দিয়েছেন এই বিক্ষোভে। তারা বলেছেন, এই বিক্ষোভকে বেগবান করতে এমন উদ্যোগ তাদের। সুলিভান বলেছেন, আমরা কোভিডের কাছে হেরে গিয়েছি। ব্লাক লাইভস ম্যাটার বিষয়ক বর্ণবাদ ইস্যুতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে। সুলিভান ও তার আইটি বিশেষজ্ঞ স্বামী বলেছেন, ট্রাম্প যদি নির্বাচনে বিজয়ী হন তাহলে তারা দেশের বাইরে চলে যাবেন।
প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সংগঠন প্লানড প্যারেন্টহুডের একজন পরামর্শক জেসমিন ক্লেমনস। তিনি বলেছেন, তাকে ব্যক্তিগতভাবে গর্ভপাতের জন্য অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়েছে। তার আশঙ্কা ব্যারেট বিচারপতি পদে বসলে তিনি গর্ভপাতের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করবেন। তার ভাষায়, তাই আমরা রিপাবলিকান সিনেটর মিশ ম্যাকনেল এবং ট্রাম্পকে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে দিতে পারি না। এ জন্যই আমি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছি। আমরা এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছি সেইসব মানুষের প্রতি সম্মান জানাতে যারা আমাদের অধিকারের পক্ষে লড়াই করেছেন। তেমন একজন হলেন বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিন্সবার্গ।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা, গর্ভপাত, জলবায়ু পরিবর্তন, ভোটের অধিকার ও ওবামাকেয়ার ইস্যুতে সিনেটে প্রশ্ন করা হলে এর সদুত্তর দিতে পারেননি ব্যারেট। যদি তিনি সুপ্রিম কোর্টে বিচারকের পদে বসেন তাহলে সেখানে ৬-৩ ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা। ফলে রিপাবলিকানরা যা চাইবেন, তাই করতে পারবেন। এ জন্য শনিবার ওয়াশিংটনে বিক্ষোভে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক নারী। তাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুখে মাস্ক পরা। অনেকেই পরা ছিলেন বিচারপতি গিন্সবার্গের মতো কালো ঢিলেঢালা পোশাক ও লেস কলার পরা। এ সময় জনতার মাঝে একটি ব্যানারে লেখা দেখা যায়, আপনার কন্যার ভবিষ্যতের জন্য ভোট দিন। একজন মেয়ের মতো লড়াই করুন। নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিক্ষোভ হয়েছে। ব্যাডার গিন্সবার্গ আন্ডারগ্রাজুয়েট হিসেবে এখানে যে ডরমেটরিতে থাকতেন তার বাইরে এমন সমাবেশ হয়েছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.